জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি।
বিজ্ঞাপন
সংস্থাটির মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি এ বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচিকে চিঠি দিয়েছেন। এতে তিনি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত মঙ্গলবার (১৭ জুন) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স–এ দেওয়া এক পোস্টে গ্রসি নিজেই বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, “ইরান যদি আইএইএ’র সঙ্গে সহযোগিতা ফের শুরু করে, তাহলে তেহরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে বিতর্ক চলছে— তার সমাধান কূটনৈতিক পন্থায় করা সম্ভব হবে।”
এই বার্তা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার পারদ চড়েছে। এর একদিন আগেই, অর্থাৎ সোমবার মধ্যরাতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। ঠিক তার কয়েক ঘণ্টা পর গ্রসি তার বার্তা প্রকাশ করেন।
এখনও পর্যন্ত আইএইএ মহাপরিচালকের পাঠানো চিঠি নিয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা আব্বাস আরাগচির পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে তেহরান আগেও বারবার বলেছে— তাদের পরমাণু প্রকল্প সম্পূর্ণভাবে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত, এবং কোনো ধরনের পরমাণু অস্ত্র তৈরি বা মজুদের পরিকল্পনা তাদের নেই।
ইরান ১৯৭০ সালে অ্যাটমিক নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি (এনপিটি)–তে স্বাক্ষর করেছিল, যা আইএইএ-র সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে নির্দেশ করে। সে সময় ইরানের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন তৎকালীন রাজা রেজা শাহ পাহলভী। ইসলামিক বিপ্লবের আগে সই হওয়া এই চুক্তির আওতায় ইরান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা কখনও পরমাণু অস্ত্র নির্মাণ করবে না এবং আইএইএ’র সঙ্গে স্বচ্ছতা ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখবে।
গত ৬ জুন আইএইএ এক বিবৃতিতে জানায়, ইরান এমন মাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত করছে, যা দিয়ে পরমাণু অস্ত্র তৈরি সম্ভব। এই ঘোষণা প্রকাশ্যে আসার ঠিক এক সপ্তাহ পর— ১৩ জুন, ইরানে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জাতিসংঘের সংস্থার ওই বিবৃতিকেই হামলার যৌক্তিকতা হিসেবে তুলে ধরেন।
নেতানিয়াহু বলেন, “ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা থেকে বিরত রাখতেই আমাদের এই অভিযান।” যদিও ইরান এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
এই পরিস্থিতিতে, গত ১৬ জুন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেন, “ইরানে ইসরায়েলি হামলার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়েছে আইএইএ।” তিনি সংস্থাটির নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এবং বলেন, “আইএইএ’র দায়িত্ব ছিল মধ্যস্থতা, উস্কানি নয়।”
এই প্রেক্ষাপটে, রাফায়েল গ্রসির নতুন প্রস্তাবকে বিশ্লেষকরা এক ধরনের কূটনৈতিক মেরামতের উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। আইএইএ যদি ইরানকে আলোচনার টেবিলে আনতে পারে, তবে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রশমিত হওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘদিনের পরমাণু সংকটের সমাধানও পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
তবে সবকিছু নির্ভর করছে তেহরানের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের ওপর।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...