Logo Logo

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

জামায়াত-এনসিপির শর্তে নতুন অনিশ্চয়তা : ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঘিরে বিভাজন ও চাপের রাজনীতি


Splash Image

ছবি: ভোরের বাণী

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চললেও একাধিক শর্ত তুলে ধরে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। 0


বিজ্ঞাপন


সংস্কার বাস্তবায়ন, পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতিতে ভোট এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার দায়ীদের বিচারের দাবিকে সামনে এনে তারা বলছে—শর্ত পূরণ না হলে রাজপথে নেমে আন্দোলন এবং এমনকি নির্বাচন বর্জনের মতো সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অবস্থান নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নতুন অনিশ্চয়তা ও সংশয় তৈরি করছে, যা বিএনপির জন্যও চাপের কারণ হতে পারে।

বিএনপি ও জামায়াত-এনসিপির মতপার্থক্যের সূত্রপাত

নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে বিএনপি শুরু থেকেই দ্রুত ভোটের দাবি জানিয়ে আসছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে ভোট আয়োজনের প্রস্তাব দেন।

পরিস্থিতি বদলায় গত ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর। যৌথ বিবৃতিতে ফেব্রুয়ারিতে ভোট আয়োজনের ব্যাপারে সমঝোতা হয়। তবে এই সমঝোতা জামায়াত ও এনসিপি মেনে নেয়নি; তাদের অভিযোগ, সরকারের পক্ষ থেকে এককভাবে বিএনপির পক্ষে বার্তা দেওয়া হয়েছে।

৫ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র ও ফেব্রুয়ারির ভোটের ঘোষণা একই দিনে আসায় তাদের সন্দেহ আরও বেড়েছে। জামায়াত মনে করছে, এটি “ডিজাইনড” বা সাজানো নির্বাচনের অংশ হতে পারে।

শর্তের তালিকা ও মূল দাবি

জামায়াত ও এনসিপি নির্বাচনের আগে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ প্রণীত জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য আইনগত ভিত্তি চায়। পাশাপাশি তারা দাবি করছে—

* সংবিধান সংস্কার ও রাজনৈতিক সংস্কারের বাস্তবায়ন নির্বাচনের আগেই শুরু করতে হবে

* পিআর পদ্ধতিতে ভোট চালু করতে হবে

* সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে

ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি ইসলামপন্থী দল এসব দাবিতে জামায়াতের সঙ্গে আছে। তবে বিএনপি পিআর পদ্ধতির বিরোধী, এবং সংবিধান সংস্কারের কাজ নির্বাচিত সংসদের হাতে রাখতে চায়।

রাজনৈতিক চাপ ও কৌশল

বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, ভোটে আসন পাওয়ার সম্ভাবনা কম হওয়ায় এনসিপি ও জামায়াত আসন বণ্টনে দরকষাকষি ও রাজনৈতিক চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, তাদের শর্ত তুলে ধরা বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করারই কৌশল।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের বক্তব্য অনুযায়ী, “সংস্কার ও বিচারের বিষয়কে পাশ কাটিয়ে এখন নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, যা মানুষের প্রত্যাশায় চিড় ধরাচ্ছে।”

জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মা. তাহের বলেন, “অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংস্কারের সনদ আগে বাস্তবায়ন করতে হবে। যারা এতে বাধা দিচ্ছে, তারাই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”

বিএনপির প্রতিক্রিয়া

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জামায়াত-এনসিপির অবস্থানকে “মাঠের বক্তৃতা” বলে মন্তব্য করেছেন। তারা মনে করেন, সব দলই শেষ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারির ভোটে অংশ নেবে।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জামায়াত ও এনসিপি নির্বাচন বর্জন করলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চিত্র নষ্ট হবে, যা বিএনপিকে কৌশলগতভাবে বেকায়দায় ফেলতে পারে।

সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অবস্থান

অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, নির্বাচনের সময় ঘোষণা দেওয়ার পর এখন আলোচনা হবে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে, যেখানে তফসিল ও ভোটের পরিবেশ নিয়ে কথা হবে। কিন্তু সংবিধান সংস্কার বা সনদ বাস্তবায়নের মতো বিষয় ওই আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত হবে না।

নির্বাচন কমিশনও স্পষ্ট করেছে—সংবিধান সংস্কারের দাবি তাদের আলোচ্যসূচি নয়।

রাজনৈতিক মহলের শঙ্কা, নির্বাচনের আগে দাবিদাওয়ার ইস্যুতে রাজপথে কর্মসূচি পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে পারে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপি ইতিবাচক নির্বাচনী পরিবেশ আশা করলেও, প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর অনুপস্থিতি সেই ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, এখন ভোট গণতন্ত্রে ফেরার একমাত্র উপায়। তবে কোনো পক্ষের কারণে নির্বাচন অনিশ্চিত হলে, তার দায়ও সেই পক্ষকেই নিতে হবে—যা কোনো দলই সহজে গ্রহণ করতে চাইবে না।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...