বিজ্ঞাপন
ঈদের আগে মিলগেটে মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৩৩০ টাকায়। ঈদের পর সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৭৫০ টাকায়। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ ও শ্রমিক মজুরি যুক্ত হলে পাইকারি বাজারে এক বস্তায় দাম বেড়েছে প্রায় ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এতে কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা এবং খুচরায় ১০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাবুবাজারসহ বড় বড় চালের আড়তে পাইকাররা জানান, মিলগেট থেকে চাল সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। দাম বাড়ার এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে অন্যান্য চালের ক্ষেত্রেও। ২৮ ও ২৯ জাতের চাল, সুমন স্বর্ণা, শম্পা কাটারিসহ প্রায় সব ধরনের চালের দাম এক সপ্তাহে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বস্তাপ্রতি।
খুচরা বাজারে মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৯২–৯৫ টাকায়, যা আগে ছিল ৮২–৮৫ টাকা। একইভাবে ২৯ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৩–৭৪ টাকায়, আগে ছিল ৬৩–৬৪ টাকা। ২৮ এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০–৮২ টাকায়, আগে ছিল ৬৮–৭০ টাকা। এমনকি পুরাতন ও নতুন শম্পা কাটারির মধ্যেও ১০ টাকার ব্যবধান তৈরি হয়েছে।
নওগাঁ ও দিনাজপুরের মতো প্রধান উৎপাদন এলাকায় চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এর প্রভাব পড়ছে। উৎপাদন মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও এই দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা মিল মালিকদের দোষারোপ করছেন। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান বলেন, “বোরো মৌসুমের শুরুতেই করপোরেট গ্রুপগুলো হাটের অধিকাংশ ধান কিনে মজুত করেছে। এতে সাধারণ মিলারদের ধান মেলে না, ফলে তারা চাল তৈরি করতে পারছে না। সংকট তৈরি হচ্ছে বাজারে।”
চট্টগ্রামের চাকতাই, চকবাজার ও পাহাড়তলী এলাকাতেও চালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৮ টাকা কেজিতে। স্বর্ণা ও বিআর-২৮ জাতের চালের দাম কেজিপ্রতি ৫৭–৬০ টাকায় পৌঁছেছে। এখানকার ব্যবসায়ীরাও একই অভিযোগ তুলেছেন—কয়েকটি বড় করপোরেট গ্রুপ ও উত্তরের কিছু মিলার সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে।
রাজশাহীতেও একই চিত্র। মিলাররা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে নতুন ও পুরোনো চালের দাম বাড়িয়ে তুলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহী চালকল মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, “চালের বাজারে সরকারের কোনো দৃশ্যমান নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রতিবারই মৌসুমে সিন্ডিকেটের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।”
ক্রেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলছেন, নতুন ধান উঠতেই যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে আগামীতে কী হবে? কেরানীগঞ্জের মাহবুব হোসেন বলেন, “সবচেয়ে বেশি ভুগছি আমরা মধ্যবিত্তরা। বাজারে তো সরকারের কোনো হাত নেই, পুরোটা চলে মিলারদের ইশারায়।”
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বছরের পর বছর ধরে চালের বাজারে সরকারের সঠিক তদারকি না থাকার ফলে সিন্ডিকেট শক্তিশালী হয়েছে। তাদের মতে, সরকারের খাদ্য মজুত ও বাজার নজরদারির নীতিতে জোর না থাকলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
-এমএসকে
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...