Logo Logo

চিতারবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

প্রভাবশালীদের দখলে বিদ্যালয়ের জমি, প্রশাসনও অপারগ


Splash Image

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের চিতারবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক একর জমি দখলমুক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের একাধিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের এই সম্পত্তি উদ্ধারে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—বিদ্যালয়ের এই জমি আর কখনও উদ্ধার হবে কি?


বিজ্ঞাপন


১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত চিতারবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক একর ২৫ শতাংশ নিজস্ব জমির মধ্যে বর্তমানে বিদ্যালয়ের দখলে রয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। বাকি জমি বছরের পর বছর ধরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে রয়েছে। জায়গা না থাকায় বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের জন্য খেলার মাঠ তৈরি করতে পারছে না, ফলে কোমলমতি শিশুরা খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধভাবে বিদ্যালয়ের জমি দখল করে সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বারবার আবেদন করা হলেও কোনো ফল মিলছে না।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি হীরামন পারভীনের স্বামী এবং বর্তমান বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাকিল মোল্যা, সভাপতি জামাল উদ্দিন, আবুল খায়ের ও মো. আলমগীরসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে অবৈধ দখলের অভিযোগ রয়েছে।

২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান জেলা প্রশাসকের কাছে জমি উদ্ধারের আবেদন করেন। একই বছরের ২৫ নভেম্বর তৎকালীন প্রধান শিক্ষক রত্না রানী দে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন জানান। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসনের পরিমাপে বিদ্যালয়ের ১০২ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের নামে বুঝিয়ে দেওয়া হলেও দখলদাররা তা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়।

রত্না রানী দে ২০২৩ সালের ১০ এপ্রিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পুনরায় আবেদন করেন, কিন্তু জমি উদ্ধারের বদলে তাঁকে বদলি হতে হয়। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, “বিভিন্নজনের বেদখলে থাকা বিদ্যালয়ের জায়গা উদ্ধারে কোনো অগ্রগতি নেই। বরং টিনের ঘরগুলো এখন পাকা ভবনে রূপ নিয়েছে। দখল আরও পাকাপোক্ত হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, বণিক সমিতির সভাপতি জামাল উদ্দিন প্রায় এক শতাংশ, সাধারণ সম্পাদক শাকিল মোল্যা ও তাঁর ভাইরা ৫ থেকে ১০ শতাংশ জমি দখল করে রেখেছেন। অন্য প্রভাবশালীরাও একইভাবে বিদ্যালয়ের সম্পত্তি ব্যবহার করছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জামাল উদ্দিন বলেন, “বিদ্যালয়ের কোনো জমি আমি দখল করিনি। আমার ঘর আমার নিজের দালিলিক সম্পত্তিতে।”

অন্যদিকে শাকিল মোল্যা জানান, “আমি অনেক আগে একজনের কাছ থেকে জমি কিনেছি। সেটি হয়তো খাস হতে পারে, তবে বিদ্যালয়ের জমি নয়। আধা শতাংশের মতো জায়গা ভাইদের দখলে থাকতে পারে, তবে তা স্থায়ী নয়, টঙঘর মাত্র।”

তবে দাদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক বকুল দাবি করেন, তাঁর বাবা সামসুল হক বিশ্বাসই বিদ্যালয়ের এক একর ২৫ শতাংশ জমি দান করেছিলেন। তিনি বলেন, “বিদ্যালয়ের জমি এখন শতাধিক ব্যক্তির জবরদখলে। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। প্রশাসন যেন দ্রুত জমি উদ্ধারে ব্যবস্থা নেয়।”

দাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, “বিদ্যালয়ের জায়গা উদ্ধারে আমি আন্তরিক, কিন্তু বাস্তবে পারছি না। উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি তোলার পরও কোনো অগ্রগতি হয়নি।”

বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসিমা আক্তার জানান, “সরকারি আমিন নিয়ে জমি মেপেছি এবং দখলদারদের জানিয়েছি—তাদের সরে যেতে হবে। দখলকৃত জমি উদ্ধার না হলেও পুনরায় দখল ঠেকাতে পেরেছি। উদ্ধারের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, “সহকারী কমিশনার (ভূমি) জায়গাগুলো পরিদর্শন করেছেন। কিছু জটিলতা আছে, তবে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে বসে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, প্রশাসনের দৃঢ় পদক্ষেপ ছাড়া বিদ্যালয়ের এই সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার সম্ভব নয়। দখলদারদের প্রভাব যতই শক্তিশালী হোক না কেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...