Logo Logo
জাতীয়
চিকিৎসা সেবায় ঘাটতি

ভয়ংকর রূপে ফিরছে ডেঙ্গু ও করোনা


Splash Image

ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাসের উপসর্গ ও আচরণে পরিবর্তন এসেছে—এবারের প্রেক্ষাপটে এই দুই ভাইরাস অনেক বেশি ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।


বিজ্ঞাপন


তারা বলছেন, আগের মতো প্রচণ্ড জ্বর, হাচি-কাশির লক্ষণ এখন আর স্পষ্ট নয়। বরং দেখা দিচ্ছে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, গিরা ও জয়েন্টে ব্যথা, যা অনেক সময় সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভেবে অবহেলা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান উপসর্গগুলো বিভ্রান্তিকর হওয়ায় অনেক রোগী ঘরে বসে সময় পার করছেন। এতে রোগ জটিল আকার ধারণ করে পরে ICU প্রয়োজন হয়। কিন্তু তখন ICU না পেয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৮ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৫৭০ জন। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের, যা এ বছরের একদিনে সর্বোচ্চ। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১৫৯ জন। বরিশাল বিভাগে মারা গেছেন চারজন, আর একজনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায়।

অন্যদিকে, করোনা ভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১৫ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।

উপসর্গে পরিবর্তন, বাড়ছে বিভ্রান্তি

আগে ডেঙ্গুর উপসর্গ হিসেবে দেখা যেত প্রচণ্ড জ্বর, গিরায় ব্যথা, কাশি ও গলা ব্যথা। বর্তমানে সেই দৃশ্যপট অনেকটাই বদলে গেছে। এখন জ্বর অনেক সময় হয়ই না, গিরা ও গলায় ব্যথা খুব সামান্য হলেও মাথাব্যথা হয় প্রচণ্ড। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। আগের মতো হাচি-কাশি, শ্বাসকষ্ট ও জ্বরের পরিবর্তে এখন দেখা যাচ্ছে মাথাব্যথা, দুর্বলতা, কখনো কাশি ছাড়াই উপসর্গ দেখা দিচ্ছে।

এই পরিবর্তনের কারণে অনেকেই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভেবে ডাক্তার দেখাচ্ছেন না, যার ফলশ্রুতিতে রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

পরীক্ষার কিট সংকটে চিকিৎসা সেবায় জটিলতা

দেশে বর্তমানে পর্যাপ্ত পরীক্ষার কিট নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে রোগ নির্ণয়ে দেরি হচ্ছে। এতে আক্রান্ত রোগীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগ দ্রুত শনাক্ত হলে চিকিৎসা কার্যকর হয়।

তবে করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালে ফ্রি হলেও বেসরকারি হাসপাতালে অ্যান্টিজেন টেস্টে ৭০০ টাকা এবং আরটিপিসিআর টেস্টে ৩ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। অনেকে এই খরচ মেটাতে না পারায় পরীক্ষা না করেই ঘরে বসে থাকছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেস্ট ফি নির্ধারণ করে দিলে মানুষ যেমন পরীক্ষা করতে উৎসাহী হবে, তেমনি হাসপাতালগুলোর ওপর চাপও কমবে।

বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ ও সতর্কতা

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, "ডেঙ্গু ও করোনা উভয়ের আচরণগত পরিবর্তন হওয়ায় চিকিৎসা পদ্ধতিও পরিবর্তন করতে হবে। দ্রুত স্যাম্পল কালেকশন, কিট সরবরাহ ও মশা নিধনে জোর দিতে হবে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন বয়স্ক, ক্যানসার, অ্যাজমা ও কিডনি রোগীরা।"

ঢাকা নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটের যুগ্ম পরিচালক ডা. বদরুল আলম বলেন, "করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট এবং ডেঙ্গুর বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তনের কারণে উপসর্গে নতুনত্ব দেখা যাচ্ছে। কারও কাশি হয়, কিন্তু জ্বর থাকে না। আবার কারও শ্বাসকষ্ট থাকে না—এ রকম জটিল চিত্র তৈরি হচ্ছে।"

সরকারের আহ্বান

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব ফের শুরু হয়েছে। মশার বিস্তার রোধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে মানুষের অসচেতনতা এখনো বড় বাধা। তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।

ঝুঁকিতে শিশুরা

ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক শফি আহমেদ মোয়াজ বলেন, "শিশুরাও ডেঙ্গু ও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদের ফুল হাতা জামা, মোজা পরানো, মশারির মধ্যে ঘুমানো, বাইরে রোদে না নেওয়ার মতো সতর্কতা নিতে হবে।"

বিশেষজ্ঞরা একমত যে, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ একসঙ্গে না চললে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে স্যাম্পল কালেকশন, দ্রুত পরীক্ষার ব্যবস্থা, পরীক্ষার ফি নির্ধারণ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব না দিলে এ মহামারি রোধ করা সম্ভব হবে না।

আরও পড়ুন

রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিতের পর নির্বাচন : শফিকুল ইসলাম মাসুদ
রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার ও গণহত্যার বিচার নিশ্চিতের পর নির্বাচন : শফিকুল ইসলাম মাসুদ
সারা দেশে এক লাখ শিক্ষক নিয়োগ : এনটিআরসিএ’র ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
সারা দেশে এক লাখ শিক্ষক নিয়োগ : এনটিআরসিএ’র ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ