Logo Logo
বিশ্ব
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের দাবি

যুদ্ধবিরতির ‘খুব কাছাকাছি’ হামাস-ইসরায়েল


Splash Image

ছবি : সংগৃহীত।

ইরান-ইসরায়েলের ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ অবশেষে থেমেছে, তবে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মানুষের ভাগ্য এখনও অব্যবহৃত। যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হলেও মাটিতে এর প্রতিফলন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।


বিজ্ঞাপন


গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতাকারীরা জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানাচ্ছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ দাবি করেছেন, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সমঝোতা এখন ‘খুব কাছাকাছি’।

তবে এই আশার আলোকে আবারও আচ্ছন্ন করেছে নতুন প্রাণহানির খবর। বুধবার (২৫ জুন) সকালে ইসরায়েলের চালানো এক হামলায় অন্তত ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এদের অনেকেই ত্রাণ সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তথ্যটি হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে নিশ্চিত করা হয়।

অন্যদিকে, মঙ্গলবার হামাসের দাবি করা এক বোমা হামলায় সাত ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি ফেরতের বিষয়ে নতুন আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মধ্যস্থতাকারীরা। তবে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সাড়া দেয়নি।

এদিকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্রাসেলসে সাংবাদিকদের বলেছেন, “গাজা নিয়ে বড় অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের (ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায়) আক্রমণের কারণেই গাজায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে। আমি মনে করি শিগগিরই ভালো কিছু শুনতে পাবো।” তিনি আরও জানান, বিশেষ দূত উইটকফ তাঁকে জানিয়েছেন, “গাজায় সমঝোতা খুবই কাছাকাছি।”

তবে বাস্তবতায় চিত্র অনেক ভিন্ন। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হামাসের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, মধ্যস্থতাকারীরা কাজ করছেন ঠিকই, কিন্তু এখনও পর্যন্ত নতুন কোনো প্রস্তাব হাতে আসেনি।

ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম হারেৎজকে জানান, আলোচনায় এখনো কোনো গঠনমূলক অগ্রগতি নেই এবং বড় ধরনের মতপার্থক্য বিদ্যমান।

এর আগে মে মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের যৌথ সহায়তায় ৬০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনা হয়। কিন্তু হামাস এতে কিছু সংশোধনী দাবি করলে আলোচনা স্থবির হয়ে পড়ে।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৮ মার্চ ইসরায়েল আবারও গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। বর্তমানে সেখানে অন্তত ৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত।

একই সময়ে, মার্চের শুরু থেকেই গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইসরায়েল। তিন মাস পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এই নিষেধাজ্ঞা আংশিক শিথিল করা হয়। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে গঠিত হয় গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচটি), যা একটি নতুন ত্রাণ বিতরণ কাঠামো চালু করে।

জিএইচটির দাবি, ২৬ মে থেকে তারা ইতোমধ্যে ৪ কোটি ৪০ লাখের বেশি খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছে। কেবল বুধবারই ৩টি বিতরণকেন্দ্রে ২৪ লাখের বেশি প্যাকেট বিতরণ হয়েছে।

তবে এই ত্রাণ কাঠামোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। হামাসকে বাইপাস করে পরিচালিত এই ত্রাণ ব্যবস্থাকে তারা মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী বলেই চিহ্নিত করেছে।

এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, জিএইচটি কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ত্রাণ সংগ্রহের সময় গুলিবর্ষণে ৫৪৯ জন নিহত এবং অন্তত ৪ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।

বুধবারও কেন্দ্রীয় গাজায় জিএইচটির এক বিতরণকেন্দ্রে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ৬ জন এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফায় আরও ৩ জন নিহত হন বলে হামাসের সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে।

তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এসব ঘটনার কোনো দায় স্বীকার করেনি এবং দাবি করেছে, তারা হতাহতের কোনো তথ্য পায়নি।

গাজায় বর্তমান পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে এসে ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার বলেন, “যতদিন মানুষকে খাবার থেকে বঞ্চিত করা হবে, ততদিন তারা এই মৃত্যুফাঁদে বাধ্য হয়ে ফিরে আসবে।”

যুদ্ধ থেমেছে—তথ্যে হয়তো সত্য, কিন্তু বাস্তবে গাজার জন্য যেন যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি।

আরও পড়ুন

আঞ্চলিক সড়ক দুই লেন ও ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রীজ গার্ডার ব্রীজে রূপান্তর করার দাবী
আঞ্চলিক সড়ক দুই লেন ও ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রীজ গার্ডার ব্রীজে রূপান্তর করার দাবী
জেলেকে পিটিয়ে হত্যা, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার ভাই
জেলেকে পিটিয়ে হত্যা, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার ভাই