বিজ্ঞাপন
বাসাবাড়িতেও পানি প্রবেশ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে ১৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমী বায়ুর সক্রিয়তার কারণে বৃষ্টিপাত আরও বাড়তে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি। এ অবস্থায় নদীবন্দরগুলোতে ১ নম্বর এবং সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
প্রবল বর্ষণের ফলে নোয়াখালীর সদর, সুবর্ণচর, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুর উদ্দিন জাহাঙ্গীর জানান, টানা বৃষ্টির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর চারপাশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে এবং যাতায়াত অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে বুধবার ও বৃহস্পতিবারের নির্ধারিত পরীক্ষাগুলো স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, একদিনে জেলার পানির উচ্চতা ১৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে। যদিও তা এখনো বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। তবে ফেনীর মহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
জলাবদ্ধতা সবচেয়ে বেশি দেখা দিয়েছে সদর, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায়। জেলা শহর মাইজদী এবং পৌরসভার স্টেডিয়াম পাড়া, জেলখানা সড়ক, ফকিরপুর, হরিনারায়ণপুর, লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হাউজিং এলাকায় হাঁটুপানি জমে গেছে। এসব এলাকায় নিচতলার বাসা ও কাঁচা ঘরগুলোতে পানি ঢুকে গেছে, ফলে বহু মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে জেলার অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি জমে থাকায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। চলতি বর্ষায় সড়কগুলোর অবস্থা এমনিতেই খারাপ ছিল, আর এখন তা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। খানাখন্দে ভরা রাস্তাগুলো এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শহরের জলাবদ্ধতার মূল কারণ পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং পানি নিষ্কাশনের নালা ও জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাওয়া। তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যার সমাধানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পৌর এলাকায় হালকা বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, সেখানে টানা ভারী বর্ষণ যেন দুর্ভোগের চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌর এলাকার করালিয়া, মওদুদ স্কুল, কলেজ গেট, হাসপাতাল গেটসহ বহু এলাকায় রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, সেনবাগ ও সুবর্ণচরেও মুষলধারে বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ জানিয়েছেন, “বিভিন্ন এলাকা আমি ঘুরে দেখেছি। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি বৈঠক চলছে।” তিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
সচেতন মহল মনে করছেন, শুধু প্রশাসনের ওপর দায়িত্ব না চাপিয়ে জলাবদ্ধতা মোকাবেলায় স্থানীয় বাসিন্দাদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল রাখতে এবং জলাশয় ও নালাগুলো দখলমুক্ত রাখতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
প্রতিবেদক - গিয়াস রনি, নোয়াখালী।