প্রতীকী ছবি। ছবিটি এআই দ্বারা নির্মিত
বিজ্ঞাপন
এই পরিস্থিতিতে শেষ মুহূর্তের আলোচনায় বসতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছে বাংলাদেশের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক স্থানীয় সময় রোববার (২৭ জুলাই) ‘ফক্স নিউজ সানডে’ অনুষ্ঠানে বলেন, “শুল্ক কার্যকর হওয়ার নির্ধারিত সময়সীমা চূড়ান্ত, তা আর বাড়ানো হবে না।” তবে তিনি জানান, “শুল্ক কার্যকর হওয়ার পরও আলোচনার পথ খোলা থাকবে।”
এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, জাপান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে। সর্বশেষ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও একটি চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখনো কোনো সমঝোতায় পৌঁছায়নি।
যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছেছে, তারা ঘোষিত ১০ শতাংশ ভিত্তি শুল্কের চেয়েও বেশি হারে শুল্ক দিতে সম্মত হয়েছে। তবে যারা এখনো চুক্তি করেনি, তাদের জন্য নির্ধারিত ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক হারের তুলনায় এই হার অনেকটাই কম।
বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আজ (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছে। তিন দিনব্যাপী এ সফরে তারা ইউএসটিআরের (মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। মূল আলোচ্য বিষয় হবে মার্কিন শুল্কহার, বাজারে প্রবেশাধিকার এবং দ্বিপাক্ষিক আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাল্টা শুল্ক কমাতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে বেশ কিছু কৌশলগত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বোয়িং কোম্পানি থেকে ২৫টি বিমান কেনার অর্ডার, প্রতিবছর ৭ লাখ টন গম আমদানির চুক্তি, তুলা ও সয়াবিন আমদানির পরিমাণ তিনগুণ বৃদ্ধি এবং বর্তমানে ৩০ কোটি ডলারের ভোজ্যতেল আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি।
বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, “বাজারের বাস্তবতা মাথায় রেখে আমরা পারস্পরিক স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করছি। এখন কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময়, যাতে পাল্টা শুল্কের চাপ কিছুটা কমানো যায়।” তিনি আরও জানান, “আগে ১৪টি বোয়িং কেনার অর্ডার ছিল, এখন তা ২৫টিতে উন্নীত করা হয়েছে। গম, তুলা ও সয়াবিন আমদানির ক্ষেত্রেও আগাম চুক্তি হয়েছে। এটি শুধু কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, বরং সরবরাহ চেইন নিরাপদ রাখা এবং বিকল্প বাজার গড়ে তোলার কৌশল।”
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব প্রতিশ্রুতি কোনো একক নির্ভরতার প্রতীক নয়। ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যান্য উৎস থেকেও আমদানি করা হবে। তবে আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে মার্কিন শুল্কহার কমানো, কারণ ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক দিয়ে মার্কিন বাজার ধরে রাখা বাংলাদেশি পণ্যের জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে।
বাণিজ্যসচিব আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রতিটি অনুচ্ছেদের জবাব আমরা দিয়েছি। এখন সময় এসেছে সরাসরি আলোচনার। চীনের বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়া কিছু উৎপাদন বাংলাদেশে স্থানান্তরের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, সেটি আমরা কাজে লাগাতে চাই।”
এদিকে পোশাক শিল্পের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, “মার্কিন বাজারে বাংলাদেশ যে অবস্থানে আছে, তা ধরে রাখতে হলে ভারত ও ভিয়েতনামের মতো শুল্কছাড় প্রয়োজন। না হলে আমাদের রপ্তানি হুমকির মুখে পড়বে।”
বাংলাদেশের রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে শেষ মুহূর্তের এ আলোচনা কতটা ফলপ্রসূ হয়, তা দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের দিক নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
জনপ্রিয়
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...