ছবি : সংগৃহীত।
বিজ্ঞাপন
সকাল থেকেই ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেন। প্রথম দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সাড়ে ১১টার দিকে হামিরদী ও আলগী ইউনিয়নের কয়েক হাজার গ্রামবাসী লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। গাছের গুঁড়ি ফেলা, টায়ার জ্বালানো এবং বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে মহাসড়ক অচল করে দেন তারা।
দুপুরের দিকে উত্তেজিত জনতা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ভাঙ্গা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মসজিদের সামনে এপিবিএন ও পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। পুলিশের ১০ থেকে ১২ জন সদস্য রক্তাক্ত অবস্থায় মসজিদে আশ্রয় নেন। পরে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় মুসল্লিরা তাদের রক্ষা করেন।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে কয়েক হাজার মানুষ উপজেলা পরিষদ চত্বর, নির্বাচন কার্যালয় ও পৌরসভায় হামলা চালায়। উপজেলা পরিষদের হলকক্ষ, নির্বাচন কার্যালয়, ইউএনওর কার্যালয় এবং অফিসার্স ক্লাবে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাঙ্গা থানা ও হাইওয়ে থানায় থাকা পুলিশের ছয়-সাতটি গাড়ি ও জব্দকৃত মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে রাখা পাঁচ-ছয়টি মোটরসাইকেলও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
সংঘর্ষের সময় সংবাদ সংগ্রহে থাকা একাধিক সাংবাদিকের ওপর হামলা চালানো হয়। মাইটিভির সাংবাদিক সারোয়ার হোসেনকে কুপিয়ে জখম করা হয়। আহত হন আরও কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী। তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত গেজেটের মাধ্যমে ফরিদপুর-৪ আসনের আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করে নির্বাচন কমিশন। এরপর থেকেই ভাঙ্গায় স্থানীয়রা পুরোনো সীমানা বহালের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। রোববার থেকে তিন দিনের সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি চলছে।
অবরোধে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ায় রোববার রাতে পুলিশ ৯০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত পরিচয় ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করে। মামলার ১ নম্বর আসামি ‘সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদ’-এর প্রধান সমন্বয়ক ও আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ম ম সিদ্দিক মিয়াকে শনিবার গভীর রাতে নগরকান্দা থেকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। একই মামলায় সমন্বয়ক তৌহিদুল ইসলাম বুলবুলকেও রোববার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “রাস্তা ব্লক করার অধিকার কারও নেই। এতে লাখ লাখ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। এটা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।”
পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ভাঙ্গা থানার তিনটি গাড়ি এবং হাইওয়ে থানার একটি অ্যাম্বুলেন্স, রেকার, জলকামানসহ আটটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। মামলায় জব্দ করা একটি প্রাইভেটকারেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। হাইওয়ে থানায় ব্যবহৃত ও জব্দ করা ১৭টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ও পরিষদ হলকক্ষের সব আসবাব, নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে থাকা চারটি মোটরসাইকেলও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার পর ভাঙ্গা থানা পরিদর্শনে যান পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক। জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্যা জানান, “বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা চলছে। নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। আশা করছি দু-এক দিনের মধ্যেই সমাধান হবে।”
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলে ধীরে ধীরে আন্দোলনকারীরা সড়ক থেকে সরে যান। সন্ধ্যার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...