বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, এসব ইস্যুতে ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করে নির্বাচনের পরিবেশ ও রাজনীতিতে অযথা উত্তাপ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনের চতুর্থ তলায় আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. তাহের বলেন, “নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তিকর তথ্য ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এতে জামায়াতে ইসলামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায় কি না— এ নিয়ে সংশয় তৈরির চেষ্টা চলছে। অথচ আমাদের অবস্থান একদম স্পষ্ট।”
তিনি বলেন, “আমরা জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই আইনগত ভিত্তির মাধ্যমে। কমিশনের সুপারিশের আলোকে অবিলম্বে একটি আদেশ জারি করতে হবে। আমরা জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট চাই। গণভোটের রায়ের ভিত্তিতেই আমরা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাই। আমাদের বক্তব্য ও বার্তা স্পষ্ট ও পরিষ্কার।”
ড. ইউনূসের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে তাহের বলেন, “আজকের মধ্যেই আদেশ জারি হলে খুবই উত্তম হবে। রাত ১২টা, ১টার মধ্যেও তো আদেশ জারির নজির রয়েছে। যদি কোনো কারণে আজ না হয়, তবে অবশ্যই আগামীকাল আদেশ জারি করতে হবে। দেরি হলে তা জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করবে এবং এর দায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের ওপর বর্তাবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনটি সুস্পষ্ট অঙ্গীকারের একটি ছিল সংস্কার। এটি এই অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন হতে পারত। যদি এটিকে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে বাংলাদেশ নতুন দিগন্তে প্রবেশ করবে। এই সংস্কারের প্রস্তাবনাগুলোর মধ্য দিয়েই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিবর্তনের পথ উন্মোচিত হবে— যা আমরা ‘নতুন বাংলাদেশ’ বলছি।”
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা প্রসঙ্গে জামায়াতের এই নেতা বলেন, “সক্রিয় ৩১টি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অনেক বিষয়েই আমরা একমত হয়েছি। কেউ কেউ বলছেন, ঐকমত্য কমিশন নাকি একটি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে— এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কমিশনের আলোচ্যসূচিতে যা ছিল, সেটিই আলোচনা হয়েছে, কোনো দলের এজেন্ডা নয়।”
তিনি আরও বলেন, “অনেকগুলো পয়েন্টে আমাদের শুরুতে দ্বিমত ছিল, কিন্তু আলোচনা শেষে একমত হয়েছি। চিন্তায় পরিবর্তন এসেছে। অফিসিয়ালি ও আনঅফিশিয়ালি নানা বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। শেষ পর্যন্ত এনসিপি ছাড়া সব দল সনদে স্বাক্ষর করেছে— বিএনপি ও জামায়াত পাশাপাশি স্বাক্ষর দিয়েছে। ৬০ থেকে ৬৫টি সংস্কার প্রস্তাবে আমরা একমত হয়েছি, কিছুতে শতভাগ না হলেও ৮০-৯০ শতাংশ ঐকমত্য ছিল।”
তাহের বলেন, “তিন-চতুর্থাংশ মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। কেউ কেউ ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে— এর মানে রায় হয়ে গেছে, কিন্তু কেউ ভিন্নমত দিয়েছেন। হাইকোর্টেও তো এমন হয়। এতে মূল রায় ভিন্ন হয় না। এখন যদি প্রতিটি ভিন্নমতের বিষয়ে গণভোট করতে হয়, তাহলে প্রতিদিনই গণভোট লাগবে। এটা অবাস্তব।”
তিনি অভিযোগ করেন, “কোনো কোনো দল কঠিন বক্তব্যের আড়ালে ধোঁয়াশা তৈরি করছে, জনগণকে আসল বিষয় থেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ বলছে, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে। অথচ ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত জনগণের প্রত্যাশারই প্রতিফলন।”
তাহের বলেন, “জামায়াতে ইসলামী সবসময় চেষ্টা করে যাতে কঠোর বক্তব্যের কারণে অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট না হয়। রাজনীতিতে অসহিষ্ণু পরিবেশ আমরা চাই না।”
গণভোট ও জাতীয় নির্বাচনের পার্থক্য ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “গণভোট হচ্ছে সংস্কার চার্টারকে বৈধতা দেওয়ার বিষয়, আর জাতীয় নির্বাচন জনপ্রতিনিধি ও সরকার গঠনের বিষয়। দুটি ভিন্ন বিষয়কে একত্র করলে স্বচ্ছতা ক্ষুণ্ণ হবে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “যারা ভিন্ন ইস্যু সামনে এনে সময়ক্ষেপণ করছেন, তারা যেন এমন পরিবেশ না তৈরি করেন, যা জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ায়।”
তাহের বলেন, “আমরা সবাই মিলে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন চাই। এর মধ্যে সরকার যদি থেমে থাকে, তবে সেটা অজানা কারণে। সময়ক্ষেপণ করে শেষ মুহূর্তে ‘সময় নেই’ বলা যাবে না। এটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও রাজনৈতিক চালবাজি হিসেবে বিবেচিত হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, ড. এইচ. এম. হামিদুর রহমান আজাদ এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...