Logo Logo

মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ


Splash Image

আজ ১৭ নভেম্বর (সোমবার) মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এই দিনে ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে তাকে টাঙ্গাইলের সন্তোষে দাফন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে সন্তোষসহ দেশজুড়ে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তাঁকে স্মরণ করা হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


টাঙ্গাইলের সন্তোষে ভাসানী পরিবার, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মুরিদান, ভক্ত, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ বিভিন্ন আয়োজন করেছে। ভাসানী ফাউন্ডেশন ও খোদা-ই-খেদমতগারের উদ্যোগে চলছে সাত দিনব্যাপী ‘ভাসানী মেলা’। প্রতিদিন দেশজ পণ্যের স্টল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং স্মরণানুষ্ঠানে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।

এদিকে বিএনপির উদ্যোগে ‘মওলানা ভাসানী মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি’ দুই দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গতকাল রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আজ তারা টাঙ্গাইলের সন্তোষে মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, শ্রদ্ধা নিবেদন ও আলোচনা সভা করবে। পাশাপাশি বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি টাঙ্গাইল শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘গণঅভ্যুত্থান-২৪ পরবর্তী সময় বাংলাদেশে মওলানা ভাসানীর প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

মাজারপ্রাঙ্গণে চলমান সাত দিনব্যাপী মেলায় ভিড় বেড়েছে সাধারণ মানুষের। অনেকে কয়েক দিন আগেই সন্তোষে এসে অবস্থান নিয়েছেন, প্রিয় নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।

১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের সয়া-ধানগড়া গ্রামে জন্ম নেওয়া মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী চেতনার মধ্য দিয়ে। ১৯০৭ সালে ইসলামি শিক্ষার জন্য দেওবন্দ মাদ্রাসায় যোগ দেন তিনি। ১৯১৭ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।

১৯২৩ সালে ‘স্বরাজ্য পার্টি’ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি এবং ১৯২৬ সালে আসামে কৃষক-প্রজা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯২৯ সালে ধুবড়ীর ভাসান চরে কৃষক সম্মেলন আয়োজনের মধ্য দিয়ে তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয় ‘ভাসানী’ উপাধি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি বাংলা-আসাম প্রদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের অন্যতম স্থপতি এবং ১৯৫৭ সালের ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনের মূল প্রভাবক ছিলেন। সেই সম্মেলনে পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের বিরুদ্ধে তার ‘খামোশ’ উচ্চারণ আজও ইতিহাসের মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত।

স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি ছিলেন তিনি। নিপীড়িত মানুষের অধিকার, স্বায়ত্তশাসন, স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা তাঁকে ‘মজলুম জননেতা’ হিসেবে সর্বজনীন স্বীকৃতি এনে দেয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলেন, “মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। তিনি আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নাম।”

তিনি আরও বলেন, “সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামের এই প্রবাদপুরুষ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে উপমহাদেশের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের পক্ষে আপসহীন ও সাহসী নেতৃত্ব দিয়েছেন।”

অন্যদিকে, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি—ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা মওলানা ভাসানীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অবহেলা ইতিহাস কখনো ক্ষমা করবে না।”

তারা ১৭ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালনের দাবি জানান। তাদের মতে, মওলানা ভাসানী-ই প্রথম পূর্ববাংলার মানুষকে স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার দাবিতে সংগঠিত করেছিলেন, যা পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতার সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করে।

মওলানা ভাসানীর এই আদর্শ ও সংগ্রাম আজও দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সার্বভৌমত্ব ও নিপীড়িত মানুষের ন্যায্য অধিকারের আন্দোলনে প্রেরণার উৎস হয়ে আছে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...