বিজ্ঞাপন
পরশুরাম পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ কোলাপাড়ার আলী আহমদের বড় ছেলে মোবারক হোসেন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, বহু বছর আগে একবার বন্যার সময় তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। তারপর থেকেই স্বজনরা মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে, বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে ও প্রচুর অর্থ ব্যয় করেও পাননি কোনো হদিশ। দীর্ঘদিন কোনো সন্ধান না পাওয়ায় কাগজপত্র ও সম্পত্তি-সংক্রান্ত জটিলতা মেটাতে পরিবার বাধ্য হয়ে তার নামে মৃত্যু সনদ সংগ্রহ করেন।
অবশেষে কয়েক দিন আগে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রাজবাড়ি এলাকায় এক এনজিও কর্মীর মাধ্যমে তার সন্ধান মেলে। ওই কর্মী পূর্বে পরশুরামে এনজিওতে চাকরি করতেন এবং মোবারকের পরিবারের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। গৌরীপুরে এক পর্যায়ে মোবারকের সঙ্গে দেখা হলে তিনি পরিচয় নিশ্চিত করতে পরশুরাম কলেজ রোডের ব্যবসায়ী আবু আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নাম, ঠিকানা ও অতীতের তথ্য মিলিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়—তিনি নিখোঁজ হওয়া মোবারক হোসেনই।
খবর পেয়ে স্বজনরা দ্রুত ময়মনসিংহে গিয়ে তাকে বাড়ি নিয়ে আসেন। বড় মেয়ে মঞ্জু আক্তার আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, “বাবা নিখোঁজ হওয়ার দিন বলেছিলেন—ওসি বাহার ভাই বদলি হচ্ছেন, তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। এরপর আর বাবার কোনো খোঁজ পাইনি। তখন আমার বয়স ছিল ১৭ বছর। আজ এত বছর পর বাবাকে ফিরে পেয়ে মনে হচ্ছে অসম্ভব একটি ঘটনা সত্যি হয়ে গেল।”
বড় ছেলে জামাল উদ্দিন জানান, “বাবাকে খুঁজতে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করেছি। মনে হয়েছিল বাবা আর নেই। এখন বাবাকে ফিরে পেয়েছি—এটা আল্লাহর রহমত। তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়, চিকিৎসা চলছে।”
পরিবার জানায়, মোবারক হোসেনের তিনটি সংসার রয়েছে—প্রথম স্ত্রী আঁখি আক্তারের ঘরে পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে; দ্বিতীয় স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের ঘরে তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। পরে ময়মনসিংহে তিনি তৃতীয় বিয়ে করলেও সেই সংসারে সন্তান নেই।
একজন মানুষের তিন দশকেরও বেশি সময় পর আপন ঠিকানায় ফিরে আসার ঘটনা পুরো এলাকায় বিরল আনন্দের স্রোত বইয়ে দিয়েছে। স্থানীয়দের ভাষায়, “জীবনের শেষ প্রান্তে হলেও তিনি পরিবারে ফিরেছেন—এটাই বড় সৌভাগ্য।”
প্রতিবেদক- মশি উদ দৌলা রুবেল, ফেনী।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...