বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা মৎস্য দপ্তর থেকে মাত্র তিনশ মিটার দূরেই অবস্থান এই অভয়াশ্রম। মৎস্য অফিস থেকেই যার পুরো অংশ চোখে পড়ে। অথচ সরকারি প্রকল্পের নিরাপত্তা ও সংরক্ষণ নীতিমালা অমান্য করে অভয়াশ্রমের মাঝামাঝি স্থানে দুইটি বড় ফাঁদ ঝাউ বসানো রয়েছে। আর একটু সামনে এগোলেই আবারও মিলছে আরও কয়েকটি মাছ ধরার ফাঁদ। নদীর অপর প্রান্তেও রয়েছে কমপক্ষে ছয়-সাতটি ঝাউ। স্থানীয় জেলেদের নিয়মিত জাল ও বড়শি দিয়েও মাছ ধরা অব্যাহত রয়েছে।
২০২৩ সালে ‘দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় তুলাতলি নদীতে এই অভয়াশ্রমটি স্থাপন করে সরকার। প্রতি বছর অভয়াশ্রম সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারের নির্ধারিত বাজেটও বরাদ্দ থাকে। নিয়ম অনুযায়ী বাঁশ, ডালপালা ও আশ্রয়সদৃশ উপকরণ ব্যবহার করে মাছের নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি করার কথা। কিন্তু বাস্তবে অভয়াশ্রমে দেখা যায় কেবল কয়েকটি পুরোনো বাঁশ—যা মাছের আশ্রয় বা প্রজননের উপযোগী পরিবেশ তৈরির জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মৎস্য কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও দুর্নীতির সুযোগ নিয়ে কিছু ব্যক্তি অভয়াশ্রমের কাছাকাছি ফাঁদ পেতে মাছ শিকার করছেন। অভিযোগ রয়েছে—মৎস্য বিভাগের কিছু কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে মিলেমিশেই এসব ফাঁদ স্থাপন করা হয়েছে। ফলে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত অভয়াশ্রমের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে এবং স্থানীয় মৎস্য সম্পদ হুমকির মুখে পড়ছে।
নিয়মানুযায়ী, অভয়াশ্রমের এক কিলোমিটারের মধ্যে মাছ শিকার, জাল ফেলা কিংবা মাছ ধরার যেকোনো ফাঁদ স্থাপন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু তুলাতলি নদীতে সেই আইন যেন কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। অপরিকল্পিত ফাঁদে বিপুল পরিমাণ মাছ ধরা পড়লেও অভয়াশ্রমে প্রায় শূন্য পরিবেশ বিরাজ করছে।
স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বলছেন, “সরকার প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করছে মাছের বংশবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবহেলায় সেই সব উদ্যোগ পানি ছাড়া আর কিছুই নয়। অভয়াশ্রমে আশ্রয়স্থল না থাকায় মাছ সেখানে যেতে চায় না। অথচ ঠিক পাশেই ঝাউয়ে ধরা পড়ছে প্রচুর মাছ।”
সরকারি অভয়াশ্রমের এই দুরবস্থা এবং নিয়ম ভঙ্গের ফলে নদীর প্রাকৃতিক মাছের সংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা দ্রুত অনিয়ম বন্ধ ও অভয়াশ্রম পুনর্গঠনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
প্রতিবেদক- মোঃ জাহিদুল ইসলাম, বরিশাল।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...