বিজ্ঞাপন
হাওরের ধান ফসল রক্ষায় প্রতি বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অস্থায়ী ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করে থাকে। তবে চলতি মৌসুমে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজ শুরু না হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ ও ফসলহানির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে হাওরে ব্যাপক ফসলহানির পর বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এর প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করে। ওই নীতিমালা অনুযায়ী, প্রকৃত কৃষক ও স্থানীয় সুবিধাভোগীদের নিয়ে ৫ থেকে ৭ সদস্যের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। একটি পিআইসি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারে।
নেত্রকোনা জেলায় মোট ৩৬৫ কিলোমিটার অস্থায়ী ডুবন্ত বাঁধ রয়েছে। এসব বাঁধের ওপর হাওরাঞ্চলের প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল নির্ভরশীল। অথচ চলতি বছর এখনো বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের প্রকল্প নির্ধারণ করা হয়নি। গত বছর জেলায় ১৯১টি প্রকল্পের আওতায় ১৭৩ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়, যেখানে ব্যয় হয় প্রায় ৩৫ কোটি টাকা।
নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিবছর ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন, ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু এবং ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু এ বছর ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাঁধের সার্ভে কাজ চলমান থাকায় প্রকল্প নির্ধারণ ও অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। ফলে বাঁধের কাজ শুরু হতে আরও সময় লাগতে পারে।
হাওরাঞ্চলের কৃষকরা জানান, ডিসেম্বর মাসের ২২ তারিখ পেরিয়ে গেলেও কোথাও বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। বর্তমানে যেখানে পুরোদমে বাঁধের কাজ চলার কথা, সেখানে শুধু মাপঝোক করা হচ্ছে। জমিতে ধান রোপণ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু ফসলরক্ষা বাঁধ না থাকায় আগাম বন্যা হলে ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা জানান, হাওরাঞ্চল এক ফসলি এলাকা। এখানকার একমাত্র ধান ফসল নষ্ট হলে সারা বছরের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।
এ বিষয়ে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, “উপজেলা পর্যায়ে পিআইসি গঠন করতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। পাশাপাশি হাওরে পানি নামতে দেরি হওয়ায় ও বাঁধের পাশের মাটি পুরোপুরি শুক না হওয়ায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। বর্তমানে বাঁধের সার্ভে কাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা যাবে।”
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “খুব দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজ শেষ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।”
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...