ছবি : সংগৃহীত।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, আগামী এক মাসের মধ্যেই গুমবিষয়ক একটি নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে এবং এর আওতায় একটি শক্তিশালী কমিশন গঠিত হবে।
সোমবার (১৬ জুন) সচিবালয়ে জাতিসংঘের বলপ্রয়োগে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে গুম সম্পর্কিত কার্যনির্বাহী দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই তথ্য জানান।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা এমন একটি কমিশন গঠন করতে চাই যা হবে বাস্তবিক অর্থে কার্যকর ও নিরপেক্ষ। এই আইনের আওতায় গুমবিষয়ক কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো, নিখোঁজদের পরিবারকে ‘মিসিং পারসন সার্টিফিকেট’ প্রদান, এবং একটি সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে।”
তিনি আরও জানান, জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে। “তারা আমাদের গুমবিষয়ক উদ্যোগ, বিশেষ করে কমিশন গঠন এবং আইনের প্রণয়নের প্রশংসা করেছে। তারা আইনগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছে,” বলেন উপদেষ্টা।
এই আইন ভবিষ্যতের কোনো সরকার বাতিল করবে কি না– জানতে চাইলে ড. আসিফ নজরুল বলেন, “বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি বা যে সরকারই আসুক, তারা সবাই গুমের শিকার হয়েছে, তারা সবাই সোচ্চার ছিলেন। বিএনপি-জামায়াত সবচেয়ে বেশি শিকার ছিলেন।”
তিনি দাবি করেন, “বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই গুমের ঘটনা ঘটেছে। তারা জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপকে বাংলাদেশে আসতে দেয়নি, এমনকি তাদের চিঠির উত্তর পর্যন্ত দেয়নি।”
ড. আসিফ নজরুল জানান, দক্ষিণ আফ্রিকান মডেলের ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের আদলে বাংলাদেশেও একটি কাঠামো গঠনের চিন্তাভাবনা চলছে। তিনি বলেন, “এই কমিশনের চারটি ধাপ আছে—ট্রুথ সিকিং, মেমোরিয়ালাইজেশন, অ্যামনেস্টি এবং রিকনসিলিয়েশন।”
ট্রুথ সিকিংয়ের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। এর মধ্যে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের রিপোর্ট, ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া এবং মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর জুলাই জাদুঘরের উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য।
তিনি বলেন, “ছোটখাটো অপরাধে যুক্ত, তবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপরাধে জড়িত নয়—এমন ব্যক্তিদের জন্য অ্যামনেস্টির সুযোগ থাকতে পারে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণও থাকতে হবে—শুধু আর্থিক নয়, চাকরি ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করতে হবে।”
দক্ষিণ আফ্রিকায় সফর নিয়ে তিনি জানান, “আমরা প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলাম, যেখানে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আঞ্চলিক সম্মেলন করার চিন্তা আছে। এতে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধি ছাড়াও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি, মানবাধিকার গ্রুপ এবং শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করা হবে।”
ড. আসিফ নজরুলের ভাষ্য অনুযায়ী, গুমবিষয়ক ন্যায়বিচার ও স্মৃতিরক্ষা সংক্রান্ত যে উদ্যোগ বর্তমান সরকার নিয়েছে, তা একটি জাতীয় ঐকমত্য গঠনের পথে বড় ধাপ হয়ে উঠতে পারে।