ছবি : সংগৃহীত।
বিজ্ঞাপন
বৈঠকে তারা দুই দেশের সম্পর্ক, আসন্ন নির্বাচন, চলমান সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট এবং শিক্ষাখাতসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
সাক্ষাৎকালে অধ্যাপক ইউনূস ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ভিসা কার্যক্রম পুনরায় চালু করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "এই পদক্ষেপ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও ভ্রমণকারীদের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা।"
হাইকমিশনার রাইল জানান, এখন থেকে ভিসার আবেদন অনলাইনের মাধ্যমে জমা দেওয়া যাবে। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে ৬৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন এবং ১৪ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সে দেশে অধ্যয়নরত।
চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “অস্থির সময়ের পর আমরা এখন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রয়েছে সংবিধান, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনিক সংস্কারে — এগুলোই একটি শক্তিশালী বাংলাদেশের ভিত্তি।”
তিনি আরও জানান, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে একটি সুষ্ঠু উত্তরণের লক্ষ্যে আগামী মাসে ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকীতে 'জুলাই সনদ' ঘোষণা করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর। তিনি বলেন, “বহু বছর পর প্রথমবারের মতো জনগণ, বিশেষ করে প্রথমবার ভোটার হওয়া তরুণরা স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে। আমি বিশ্বাস করি এটি একটি আশাব্যঞ্জক সময়।”
অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে নির্বাচনী সহায়তার আশ্বাস দিয়ে রাইল জানান, ইউএনডিপির মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে তারা ২০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার সহায়তা দেবে।
বৈঠকে অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে আলোচনার সময় হাইকমিশনার রাইল বলেন, দুই দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন বর্তমানে ৫ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার ছাড়িয়েছে, যা গত পাঁচ বছরে বার্ষিক গড়ে ১৬.২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বলেন, "অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশে ৩,০০০-এরও বেশি প্রাক্তন শিক্ষার্থীর একটি নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে, যারা দেশের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখছে।"
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় বৃত্তির সংখ্যা আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে অধ্যাপক ইউনূস মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে বলেন, "বাংলাদেশ প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীর দায়িত্ব বহন করছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানযোগ্য হলেও আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর।"
এই বিষয়ে জবাবে রাইল জানান, “অস্ট্রেলিয়া সম্প্রতি অতিরিক্ত ৯.৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার সহায়তা দিয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের জন্য মোট সহায়তা ৫৫৩.৬ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “মিয়ানমারে পরিস্থিতি অনুকূল হলে, অস্ট্রেলিয়া নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও টেকসই প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের পাশে থাকবে।”
বাংলাদেশে তার নতুন দায়িত্ব পালন নিয়ে হাইকমিশনার রাইল বলেন, “আমি এখানে এসে সত্যিই উচ্ছ্বসিত। বাংলাদেশের প্রাণবন্ত সংস্কৃতি ও গতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমাকে দীর্ঘদিন ধরে আকৃষ্ট করেছে।”
সাক্ষাতে আরও উপস্থিত ছিলেন এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক উইং-এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম।