বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকেলে রংপুর শহরের ধাপ ইঞ্জিনিয়ারপাড়ার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে হাজিরহাট থানা পুলিশ। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
২০২৪ সালের ২ আগস্ট মুদিদোকানি ছমেস উদ্দিনের মৃত্যুর ১০ মাস পর, ২০২৫ সালের ৩ জুন তার স্ত্রী আমেনা বেগম হাজিরহাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদেরসহ মোট ৫৪ জনকে আসামি করা হয়। সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হক মামলার সর্বশেষ, অর্থাৎ ৫৪তম আসামি।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, আন্দোলন দমনে সরকারি নির্দেশে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা ছমেস উদ্দিনকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। তবে ছমেস উদ্দিনের কবরের পাশে সাইনবোর্ডে চিকিৎসকপ্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী লেখা রয়েছে, “পুলিশ দেখে দৌড়াতে গিয়ে পড়ে যান এবং স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন।” বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ও সামাজিকমাধ্যমে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
মাহমুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান বলেন, “আমার স্বামী সম্পূর্ণ নির্দোষ। তাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।” তার দাবি, মামলার তথ্য সাজাতে বাদীর কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয় এবং তাতে ওসির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। একই অভিযোগ করেন মামলার আরেক আসামির ছেলে ইউশা মোহন রাতুল, যিনি দাবি করেন, “আমার বাবাকে যুবলীগ নেতা বানিয়ে মামলায় ঢুকানো হয়েছে। অথচ তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন।”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর মাহমুদুল হকের গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে বেরোবির শতাধিক শিক্ষার্থী হাজিরহাট থানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সাবেক শিক্ষার্থী শাহীন আলম বলেন, “স্যার সবসময় শোষিতের পক্ষে ছিলেন। সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোয় আজ তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।”
এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, ছমেস উদ্দিন সাদা পোশাকে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দৌড়াতে গিয়ে পড়ে যান। ওই সময় স্ট্রোক করলে তার মৃত্যু হয়। তারা জানান, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং কিছুদিন আগেই হৃদযন্ত্রে রিং বসানো হয়েছিল।
হাজিরহাট থানার ওসি আব্দুল আল মামুন শাহ বলেন, “তদন্ত সঠিকভাবে করা হচ্ছে এবং যাচাই-বাছাই করে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।” তিনি মামলা মিথ্যা কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে “#ReleaseProfessorMahmudulHaqueImmediately” হ্যাশট্যাগে আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি একাধিক মানবাধিকার সংগঠন ও বুদ্ধিজীবীরাও এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এটি কেবল একজন শিক্ষকের গ্রেপ্তারের ঘটনা নয়, বরং রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মতপ্রকাশ ও নাগরিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপের প্রতীক হয়ে উঠেছে।