বিজ্ঞাপন
নিয়মটা এমনই। কিন্তু মাগুরা পাসপোর্ট অফিসে এই নিয়মে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যেন এক বিরল সৌভাগ্য!
কারণ, এখানে কার্যত নিয়ন্ত্রণ করছে দালাল চক্র। সাধারণ নিয়মে আবেদন করলে পাসপোর্ট পেতে ভোগান্তির যেন শেষ নেই, অথচ দালালের মাধ্যমে ‘চুক্তি’ করলে নির্ধারিত সময়ের আগেই আপনি পাসপোর্ট হাতে পেতে পারেন। এমন চিত্র উঠে এসেছে ভোরের বাণীর অনুসন্ধানে।
গত মঙ্গলবার সকাল ৯টায় মাগুরা পাসপোর্ট অফিসের সামনে পৌঁছান ভোরের বাণীর এই প্রতিবেদক। পরিচয় গোপন রেখে অপেক্ষা করতেই কয়েকজন যুবক তাকে ঘিরে ধরেন। জানতে চান, তিনি পাসপোর্ট করতে এসেছেন কিনা। প্রতিবেদক জানান, তিনি নতুন আবেদন করবেন। তখন একাধিক দালাল নিজেদের ‘সার্ভিস’-এর কথা বলে তার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেন।
একপর্যায়ে পরিচিত হন সোহাগ নামে এক দালালের সঙ্গে, যিনি আনসার সদস্য বলেও দাবি করেন। প্রতিবেদক যখন জানান, আজ নয়—আগামী সপ্তাহে আবেদন করবেন, তখন সোহাগ মানিব্যাগ থেকে একটি কাগজ বের করে প্রতিবেদকের হাতে দেন। সেখানে তার নাম ও ফোন নম্বর লেখা। বলেন, “আপনে যেকোনো সময় আইসা ফোন দিলেই আমি কাজ করে দিমু।”
ওই সময় নারী দালালদেরও সক্রিয়ভাবে অফিসের আশপাশে অবস্থান করতে দেখা যায়। প্রতিবেদক কথা বলেন কয়েকজন নারী দালালের সঙ্গে, যারা সরাসরি নিজেদের ‘সহজ উপায়ে’ পাসপোর্ট করিয়ে দেওয়ার কথা বলেন।
এখানকার কম্পিউটারের দোকানগুলো দালাল চক্রের অংশ হিসেবে কাজ করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিটি দোকান থেকে ‘সাহায্যের নামে’ বাড়তি টাকা আদায় এবং দালালদের সঙ্গে সংযোগ করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মাগুরা পাসপোর্ট অফিস চত্বরেই প্রতিদিন শতাধিক দালালের আনাগোনা থাকে। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করলেও, তারা জামিনে বের হয়ে ফের আগের কাজেই লিপ্ত হয়।
প্রশ্ন উঠেছে—দীর্ঘদিন ধরে এমন চক্র চললেও, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নীরবতা কেন? দালালদের পেছনে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, নিয়ম মেনে আবেদন করলে নানা ‘বাধা’র মুখে পড়তে হয়। সার্ভার নষ্ট, ছবি ঠিক নেই, জন্মতারিখ মেলেনি, অফিসার আসেননি— এমন অজুহাতে মাসের পর মাস ফাইল আটকে থাকে। রাসেল নামের এক ব্যক্তি বলেন, “আমি গত বছর নিজের পাসপোর্ট দালাল ছাড়া করেছিলাম, ছয় মাস লেগেছিল। এবার ভাইয়েরটা দালালের মাধ্যমে করাচ্ছি, যাতে ঠিক সময়ে পাওয়া যায়।”
মাগুরার এই চিত্র শুধু একক ঘটনা নয়, বরং দেশের অনেক পাসপোর্ট অফিসে একই বাস্তবতা বিরাজ করছে। তবে মাগুরা যেন ‘মডেল অফিস’ হয়ে উঠেছে দালালতন্ত্রের দাপটে। জনসাধারণের প্রশ্ন—এমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশন কেন এখনো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি?
প্রতিবেদক - মো: রাজিব হোসেন, মাগুরা।