ছবি: সংগৃহীত
বিজ্ঞাপন
বিশ্বে আটটি দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক হলেও, ইরান সেই তালিকায় নেই। তারপরও বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা মিত্ররা অভিযোগ করে আসছে, ইরান গোপনে পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৩ জুন ইরানে আগাম হামলা চালায় ইসরাইল। এতে বেসামরিক ও সামরিক স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং বহু নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়।
ইরান পাল্টা জবাব দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে এবং ইসরাইলের সঙ্গে মিলে ইরানের ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে অবস্থিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বিমান ও নৌবাহিনীর সাহায্যে হামলা চালায়। এই হামলার নেতৃত্ব দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যার সিদ্ধান্ত ইরানে চলমান উত্তেজনাকে আরও তীব্র করেছে।
তবে আশ্চর্যজনকভাবে এই হামলা ইরানি জনগণকে সরকারবিরোধী না করে আরও ঐক্যবদ্ধ করেছে। রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা একতাবদ্ধ হয়েছে। তেহরান থেকে জানানো হয়েছে, আমেরিকার এই ‘ন্যক্কারজনক আগ্রাসন’-এর জবাব দেবে ইরান, এবং আরব অঞ্চলে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোও হামলার টার্গেটে থাকবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমাদের একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার। দেশটি আজও পারমাণবিক শক্তিধর নয়, অথচ ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ বহু বছর ধরে এটিকে শত্রু হিসেবে দেখে আসছে। ইরানে হামলা চালালে গণতন্ত্র ফিরবে—ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর এমন বক্তব্যকে ইরানিরা কেবল ‘ভণ্ডামি’ হিসেবেই দেখছে।
ইরানিরা হয়তো নিজের দেশের সরকারকে সমালোচনা করে, কিন্তু মাতৃভূমির ওপর হামলায় তারা চুপ থাকবে না। দেশরক্ষার প্রশ্নে তারা এক কণ্ঠ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল যেসব স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, সেগুলো ইরানি জনগণের সম্পদ। কোনো নির্দিষ্ট শাসকের নয়।
তেহরান স্পষ্ট জানিয়েছে, এই হামলা শুধু ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে থামাতে ব্যর্থ হয়েছে না, বরং ইরান এখন তার পারমাণবিক সক্ষমতা আরও দ্রুত এগিয়ে নিতে পারে। ভবিষ্যতে যদি আত্মরক্ষার নামে ইরান পারমাণবিক প্রতিরক্ষা নীতি গ্রহণ করে, তবে তারা এটিকে যুক্তিযুক্ত বলেই মনে করবে।
সবশেষে, ইরানি জনতা পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে: যেসব বিদেশি শক্তি তাদের দেশে হামলা চালিয়েছে, ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে, নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে—তাদের তারা কোনোদিন ক্ষমা করবে না, ভুলবেও না।
-এমএসকে