বিজ্ঞাপন
দেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত এই গণজাগরণকে কেন্দ্র করে আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হবে ব্যাপক আয়োজনে গঠিত স্মরণ কর্মসূচি। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত—টানা ৩৬ দিন।
আজ মঙ্গলবার (২৫ জুন) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। গত ১৯ জুন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, “জুলাইয়ের অভ্যুত্থান গোটা দেশকে যেমন ঐক্যবদ্ধ করেছিল, তেমনি আমরা আবার সেই অনুভূতিটিকে ফিরিয়ে আনতে চাই।”
কর্মসূচির বিস্তারিত :
১ জুলাই : উপাসনালয়গুলোতে শহীদদের স্মরণে দোয়া ও প্রার্থনা। “জুলাই ক্যালেন্ডার” প্রকাশ ও খুনিদের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু (চলবে ১ আগস্ট পর্যন্ত)। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে “জুলাই শহীদ স্মরণ শিক্ষাবৃত্তি” চালু।
৫ জুলাই : আওয়ামী শাসনের সময়ের নির্যাতন তুলে ধরে দেশব্যাপী পোস্টারিং কর্মসূচি।
৭ জুলাই : “Julyforever.org” ওয়েবসাইট চালু।
১৪ জুলাই : মূল ইভেন্ট শুরু। শিরোনাম ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’। শহীদ পরিবারের সাক্ষাৎকার, স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন, ভিডিও প্রদর্শনী, প্রজেকশন ম্যাপিং ও ড্রোন শো।
১৫ জুলাই : ‘আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া’—ভিডিও শেয়ার, স্মৃতিচারণ, ডকুমেন্টারি, এলইডি ওয়াল।
১৬ জুলাই : ‘কথা ক’—ভিআর শো, স্মরণসভা, গান ও ড্রোন শো।
১৭ জুলাই : ‘শিকল-পরা ছল’—প্রতীকী কফিন মিছিল, স্মরণ অনুষ্ঠান, শিক্ষক বক্তৃতা ও ডকুমেন্টারি।
১৮ জুলাই : ‘আওয়াজ উডা’—১ মিনিটের ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট, তথ্যচিত্র, রক্তাক্ত স্মৃতির ট্র্যাশন শো ও ম্যারাথন।
১৯ জুলাই : ‘কত বিপ্লবী বন্ধুর রক্তে রাঙা’—গণহত্যা ও ছাত্র প্রতিরোধ দিবস, তথ্যচিত্র, সমাবেশ।
২০-২১ জুলাই : ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’ ও ‘রক্ত গরম মাথা ঠাণ্ডা’—তথ্যচিত্র, সমাবেশ, মাদ্রাসায় স্মরণ অনুষ্ঠান।
২২-২৩ জুলাই : ‘আভাস’ ও ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’—স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন, গ্রাফিতি, আন্তর্জাতিক সংহতি অনুষ্ঠান, দূতাবাস প্রদর্শনী।
২৪ জুলাই : ‘কি করেছে তোমার বাবা’—শিশু শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠান, গ্রাফিক নভেল, শিশু ভাস্কর্য, তথ্যচিত্র ও গান।
২৫-২৭ জুলাই : নাট্যমঞ্চ, সোহরাওয়ার্দীতে ছাত্র জমায়েত, মাদ্রাসা তথ্যচিত্র, র্যাপ গান, বইমেলা, জাতিগোষ্ঠীর সংলাপ ও তথ্যচিত্র।
২৮ জুলাই : স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিজ্ঞতা, মেডিকেল ক্যাম্পেইন, তথ্যচিত্র ‘চিকিৎসা নেই, লাশ নেই’।
২৯-৩০ জুলাই : শ্রমিক সমাবেশ, প্যানেল ডিসকাশন, সাংবাদিক সম্মাননা অনুষ্ঠান।
৩১ জুলাই : ‘কাণ্ডারি হুঁশিয়ার’—সকল কলেজে স্মরণ অনুষ্ঠান।
১ আগস্ট (৩২ জুলাই) : ‘গণজোয়ার’—দূতাবাসে প্রদর্শনী, “কফি টেবিল বুক” প্রকাশনা, গণস্বাক্ষরের সমাপ্তি।
২ আগস্ট (৩৩ জুলাই) : ‘আমি বাংলায় গান গাই’—‘জুলাইয়ের মায়েরা’ শীর্ষক অনুষ্ঠান ও প্রজেকশন ম্যাপিং।
৩ আগস্ট (৩৪ জুলাই) : ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’—শোভাযাত্রা, রিকশা মিছিল, তথ্যচিত্র।
৪ আগস্ট (৩৫ জুলাই) : ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’—জুলাই যোদ্ধাদের সমাবেশ, কার্টুন প্রদর্শনী।
৫ আগস্ট (৩৬ জুলাই) : ‘শোনো মহাজন’—শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, বিজয় মিছিল, এয়ার শো ও গান।
এই বিস্তৃত কর্মসূচি শুধু স্মরণ নয়, বরং জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধোত্তর নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির বীজ বপনের উদ্যোগ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য যেমন একটি পরীক্ষার মঞ্চ, তেমনি জাতির জন্য একটি ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের সুযোগ।