বিজ্ঞাপন
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং ঘনঘন ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার কারণে বর্ষা মৌসুমে এসব অঞ্চলের মানুষকে ভয়াবহ দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়।
১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত ইন্দুরকানীর সাঈদখালী গ্রামের আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর উদ্যোগে উপজেলাজুড়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে সেইসব বাঁধ সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়। প্রাণ হারান অর্ধশতাধিক মানুষ, নিখোঁজ হন শতাধিক। এরপর থেকে এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো সংস্কার বা নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে অধিকাংশ বাঁধ ভাঙা ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। নদীতে স্রোতের তীব্রতা বাড়লেই এসব বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। বিশেষ করে বালিপাড়া ইউনিয়নের সাঈদখালী বাজার থেকে কালাইয়া আবাসন পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া চন্ডিপুর, বালিপাড়া, চাড়াখালী, ইন্দুরকানী, চরবলেশ্বর, কালাইয়া ও কলারন এলাকার মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিয়মিত।
সাঈদখালী গ্রামের হাফেজ মাসুম বিল্লাহ বলেন, “আমাদের প্রধান জীবিকা কৃষি ও মৎস্যচাষ। কিন্তু বেড়িবাঁধ না থাকায় নোনা পানি জমিতে ঢুকে পড়ছে। এতে ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে এবং মাছের ঘের নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।”
চাড়াখালী গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, “সামান্য জোয়ারেই ঘরের ভেতরে পানি উঠে যায়, রান্নার চুলা পর্যন্ত ডুবে থাকে। বর্ষায় খাবার রান্না করাও সম্ভব হয় না। অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হয়।”
কালাইয়া আবাসনের বাসিন্দা হায়দার আলী বলেন, “ঝড়-বন্যার সময় ছোট শিশুদের নিয়ে আশ্রয় নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জোয়ারের পানি বাড়লে আমরা ভয়ে কাঁপতে থাকি। এখানে বেড়িবাঁধ নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি।”
এ অবস্থায় নদীতীরবর্তী মানুষের জীবন-জীবিকা আজ প্রকৃতির করুণার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। টেকসই ও আধুনিক বেড়িবাঁধ নির্মাণ ছাড়া এসব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তা না হলে প্রতি বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগে নতুন করে দুর্ভোগে পড়তে হবে।
ইন্দুরকানী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ করিম তালুকদার ইমন জানান, “জোয়ারের পানির চাপ বাড়লেই কৃষিজমি, ঘের, ঘরবাড়ি এবং রাস্তাঘাট সবকিছুই প্লাবিত হয়। ইন্দুরকানী উপজেলা ভূমি অফিস, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ও বাজারের একটি বড় অংশ নদীভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।”
ইন্দুরকানী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হাসান-বিন মুহাম্মদ আলী বলেন, “নদীতীরবর্তী জনগণের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দ্রুত সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”
বিষয়টি জানতে পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নুসাইর হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবু জাফর মোঃ রাশেদ খান জানান, “ইন্দুরকানীর কচা ও বলেশ্বর নদীর যেসব বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোর পূর্ণ নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
-নাছরুল্লাহ আল কাফী, পিরোজপুর প্রতিনিধি।