ছবি : সংগৃহীত।
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে জানা গেছে, আগামী ২৬ জুন মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হতে পারে। এর আগে গত ১৫ জুন ট্রাইব্যুনাল ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে সময় নির্ধারণ করেছিল। একইসঙ্গে মামলার শুনানির জন্য ২৬ জুন দিন ধার্য করে দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন বিচারকের বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন, বি এম সুলতান মাহমুদ ও এস এম মঈনুল করিম। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রাশেদুল হক খোকন ও দেলোয়ার হোসেন সোহেল।
গত ৯ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল চারজনকে হাজির করার নির্দেশ দেয় এবং ১৫ জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। প্রসিকিউশন জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন সাবেক এসআই আমির হোসেন ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়।
তাছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম ও ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান চৌধুরী আকাশসহ আরও অনেকে সহায়তা ও উসকানির মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এই চার আসামি আগে থেকেই অন্য মামলায় গ্রেপ্তার ছিলেন।
২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। এরই মধ্যে ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। সেই দিন তার দুই হাত প্রসারিত করার সময় গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায় এবং তাতে ছাত্র ও সাধারণ জনতার মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
এরপর থেকে সারাদেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ শুরু হয়। পরদিন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু হয়। আন্দোলন শীর্ষে পৌঁছাতে থাকে, যেখানে একের পর এক মৃত্যু ও সরকারি সম্পত্তিতে আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগ হয়। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৯ জুলাই কারফিউ ঘোষণা করে, তবে তাও কার্যকর হয় না।
বিগত ওই গণআন্দোলনের জোরে ৫ আগস্ট ১৫ বছরের ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। সরকারি হিসাবে, ওই আন্দোলনে সাড়ে আটশর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ড ও গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাগুলোতে দায়ী সাবেক সরকারের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং মাঠ পর্যায়ের যারা গুলি চালানোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালটি মূলত ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করার জন্য। কিন্তু বর্তমানে এটি দেশের সাম্প্রতিক গণতান্ত্রিক বিপর্যয় ও গণঅভ্যুত্থানের ঘটনার বিচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।