সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ, কেএম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল। ছবি: সংগৃহীত
বিজ্ঞাপন
মামলার আসামিদের তালিকায় রয়েছেন তিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ, সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই মামলাটি গত ২২ জুন দায়ের করেন বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন খান। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন এবং শেরেবাংলা নগর থানার এসআই শামসুজ্জোহা সরকার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২৫ জুন ঢাকার মহানগর হাকিম মো. মিনহাজুর রহমানের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দণ্ডবিধির ১২০ (ক), ৪২০ ও ৪০৬ ধারা যুক্ত করার আবেদন করেন, যা আদালত অনুমোদন করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা সংবিধান লঙ্ঘন করে ভয়ভীতি ও দমনপীড়নের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহকে নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বাদ দিয়ে ‘ভোটারবিহীন নির্বাচন’ সম্পন্ন করেছেন। এতে নির্বাচন কমিশন সংবিধানিক দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং জনগণের আস্থাকে ধ্বংস করেছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগের রাতে ভোট প্রদান নিয়ে ‘নীশিরাতের নির্বাচন’ নামে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। আর ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ শরিক ও দলীয় বিদ্রোহীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, যা ‘আমি আর ডামি’ নামে ব্যাপক সমালোচিত হয়।
এই মামলায় যাঁরা আসামি হয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন— সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার: কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, এ কে এম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনাররা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক পুলিশের মহাপরিদর্শক: হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজীর আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে—ভোটের ফল আগেই নির্ধারণ করে রাখা, বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল ও গ্রেপ্তার, এবং নিরাপত্তা বাহিনীর অপব্যবহার। এই প্রসঙ্গে হাইকোর্টের একটি রায়ে বলা হয়েছে, তিনটি জাতীয় নির্বাচনই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ, যা জনগণের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা এবং সংবিধানের নিরপেক্ষতার লঙ্ঘন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর, বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তিন নির্বাচন ঘিরে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়েছে।
মামলার অন্যতম আসামি সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে এম নূরুল হুদা এবং কাজী হাবিবুল আউয়ালকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে এবং নথিপত্র, ইলেকট্রনিক প্রমাণ ও সাক্ষ্য সংগ্রহ করছে।