ছবি : সংগৃহীত।
বিজ্ঞাপন
এই বাস্তবতা তুলে ধরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, "ভবিষ্যতে উন্নত ও সফল রাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছাতে হলে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে অবশ্যই মাদক থেকে মুক্ত রাখতে হবে।"
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নানাভাবে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো—নারী, শিশু ও কিশোরদের মাদক চোরাচালানে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে একদিকে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে, অন্যদিকে এদের অনেকেই নিজেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।
এই সমস্যা সমাধানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “সাতটি বিভাগীয় শহরে পৃথক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। মাদকাসক্তদের জন্য পৃথক কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে।”
নতুন ধরনের সিনথেটিক ও সেমি-সিনথেটিক ড্রাগসের আবির্ভাব এবং এর বিপুল হারে ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে মাদক পাচারের ধরণ পাল্টে যাচ্ছে। তাই আমাদেরও নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হচ্ছে। দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ বিষয়ে সজাগ রয়েছে।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, বর্তমানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ২ হাজার ৯৪৩ জন কর্মরত রয়েছেন, যার মধ্যে ১ হাজার ৬২২ জন এনফোর্সমেন্ট ইউনিটে নিয়োজিত। ৬৪টি জেলা কার্যালয়, ৮টি বিভাগীয় কার্যালয়, একটি বিশেষ জোন এবং ৮টি গোয়েন্দা ইউনিটের মাধ্যমে অধিদপ্তরের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
তবে তিনি স্বীকার করেন, অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তুলনায় জনবল ও লজিস্টিক সুবিধায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এখনও পিছিয়ে আছে। অভিযানে যানবাহন ও আধুনিক প্রযুক্তি সরঞ্জামের অভাব একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এসব সমস্যার সমাধানে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জন্য ‘অস্ত্র সংগ্রহ ও ব্যবহার নীতিমালা-২০২৪’ ইতোমধ্যে প্রণীত হয়েছে এবং প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণও শেষ হয়েছে।”
তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, “মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও পাচার কেবল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমস্যা নয়, এটি একটি বহুমাত্রিক সামাজিক সমস্যা। এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে জনগণের অংশগ্রহণ এখন সময়ের দাবি। সরকার এই আন্দোলনে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছে।”