বিজ্ঞাপন
এতে গ্রামাঞ্চলের মানুষ প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় টিআর (ত্রাণ ও পুনর্বাসন) প্রকল্পের আওতায় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলেও এর বড় একটি অংশ ব্যয় হয়েছে শহরকেন্দ্রিক প্রকল্পে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, স্কুল-কলেজ, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, শিল্পকলা একাডেমি ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আলোকসজ্জা, ফোয়ারা নির্মাণ, বাগান তৈরি, ওয়াকওয়ে নির্মাণের মতো কাজেই ব্যয় হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। অথচ গ্রামের অনেক রাস্তা এখনো কাঁচা, স্কুলের ভবন জরাজীর্ণ, সেতু-কালভার্ট ভগ্নদশা।
মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বছরের পর বছর গ্রামীণ সড়কগুলো সংস্কার হয় না। বর্ষায় চলাচল দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, শিক্ষার্থীরা কাদা মাটিতে হেঁটে স্কুলে যায়। অথচ শহরের ফুলবাগান আর মাঠে পাম্প বসাতে লাখ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে! তাঁদের প্রশ্ন— গ্রামের উন্নয়নের টাকা শহরে কেন?
জেলা নাগরিক উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল করিম রুবেল এবং সংস্কৃতিকর্মী মাসুদ আহমেদ সুবর্ণ জানান, টিআর প্রকল্পের বরাদ্দ গ্রামেই ব্যয় হওয়া উচিত। শহরে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে টাকা খরচ গ্রামীণ জনগণের সঙ্গে অন্যায় করা।
জেলা আইনজীবী সমিতির অ্যাডভোকেট মহসিন ভূঁইয়াও বলেন, গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের অর্থ গ্রামে ব্যয় না হলে গ্রামের মানুষ পিছিয়ে থাকবে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।
এ নিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাইরুল ইসলাম বলেন, এখানে অনিয়মের সুযোগ নেই। নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। পৌরসভা, ইউনিয়ন ও জেলা প্রশাসনের বরাদ্দ আলাদা, কাজও সে অনুসারে হয়।
জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, “আমরা মূলত গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নেই বরাদ্দের বড় অংশ ব্যয় করছি। তবে কিছু প্রকল্পে স্থানীয় চাহিদা থাকায় শহরের কিছু স্থানে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়েছে, যেমন খেলার মাঠ উন্নয়ন, ফোয়ারা বা পাঠাগার।”
প্রকল্প তালিকা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শহরের ডিসি অফিস চত্বরের বাগান ও ফোয়ারা নির্মাণ, স্কুল-কলেজের উন্নয়ন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সংস্কারসহ অন্তত ১৬টি প্রকল্পের অর্থ শহরেই ব্যয় হয়েছে। এসব প্রকল্পের ব্যয় কয়েক লাখ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্কের।
স্থানীয়দের দাবি, শহুরে সৌন্দর্যবর্ধনে প্রকল্পের অর্থ খরচ বন্ধ করে প্রকৃত গ্রামীণ সমস্যাগুলো সমাধানে বরাদ্দের অর্থ ব্যয় করা উচিত। একই সঙ্গে প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তাও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
-মোঃহুমায়ুন কবির রেজা ঠাকুরগাঁও