ছবি : সংগৃহীত।
বিজ্ঞাপন
হাজির হওয়া চার আসামি হলেন—সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর শরিফুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান চৌধুরী আকাশ।
এর আগে গত ১০ জুলাই এই মামলার পলাতক ২৬ আসামিকে হাজির হতে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই বেঞ্চ গত ৩০ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আমলে নিয়ে পলাতকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর মামলাটি আলোচনায় আসে। এতে মোট ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত ১৫ জুন ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়ে ২৬ জুন শুনানির দিন নির্ধারণ করে। এরপর ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা নির্ধারিত হয়।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন, বি. এম. সুলতান মাহমুদ ও এস. এম. মঈনুল করিম। অন্যদিকে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী রাশেদুল হক খোকন ও দেলোয়ার হোসেন সোহেল।
প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ। ঘটনার সময় তিনি দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে ছিলেন—তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়, এমন একটি ভিডিও ফুটেজ সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হলে দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
প্রসিকিউশন আরও জানায়, এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন সাবেক এসআই আমির হোসেন ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়। তাদের সহায়তা ও উসকানিতে যুক্ত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান চৌধুরী আকাশসহ আরও কয়েকজন। এই চারজন এর আগে থেকেই অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন।
আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ড এবং সেই সূত্র ধরে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিস্তার লাভ করে। ১৬ জুলাইয়ের ওই ঘটনার পরপরই দেশজুড়ে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। পরদিন থেকেই ঘোষিত হয় ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি। সরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যোগাযোগব্যবস্থা একে একে অচল হয়ে পড়ে।
পরে একে একে ঘটতে থাকে আরও মৃত্যুর ঘটনা। বিক্ষুব্ধ জনতা বিভিন্ন স্থানে সরকারি সম্পত্তিতে হামলা, অগ্নিসংযোগ শুরু করলে ১৯ জুলাই সরকার কারফিউ জারি করে। কিন্তু তা দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয় সরকার। ক্রমাগত গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট টানা ১৫ বছর ৭ মাস ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, জুলাই গণআন্দোলনের সময় সারাদেশে ৮৫০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রিসভা সদস্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা ও নিপীড়নের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই ট্রাইব্যুনালটি ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের জন্য গঠিত হয়েছিল। এবার সেই একই ট্রাইব্যুনালে বিচার হচ্ছে সেই সরকারের অধীন বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে।
জনপ্রিয়
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...