Logo Logo

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’

শহীদদের জাতীয় বীরের স্বীকৃতি, নতুন রাষ্ট্রগঠনের রূপরেখা ঘোষণা করলেন ড. ইউনূস


Splash Image

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেছেন।


বিজ্ঞাপন


ঐতিহাসিক এই ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের দিকনির্দেশনার পাশাপাশি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের “জাতীয় বীর” হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে “জুলাই পুনর্জাগরণ” অনুষ্ঠানে হাজারো জনতার উপস্থিতিতে ড. ইউনূস এই ২৮ দফার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। তিনি বলেন, “২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবেই এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে।”

ঘোষণাপত্রের ২৪ নম্বর দফায় বলা হয়েছে— “বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সব শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্রজনতাকে প্রয়োজনীয় সব আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।”

এছাড়া ২৭ নম্বর দফায় ঘোষিত হয়েছে— “২০২৪ সালের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সংযুক্ত থাকবে।”

ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকসমূহের পুনঃমূল্যায়ন করা হয়েছে। এতে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে ১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থান, ১/১১-এর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, এবং গত ১৬ বছরের “ফ্যাসিবাদী” শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বর্ণনা রয়েছে।

ঘোষণাপত্রের প্রথম দফায় বলা হয়েছে— “উপনিবেশ বিরোধী লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় এই ভূখণ্ডের মানুষ পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল।”

তৃতীয় থেকে অষ্টম দফায় উল্লেখ করা হয়েছে স্বাধীনতার পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের একদলীয় শাসনব্যবস্থা, বাকশাল প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ, এবং পরবর্তীতে সিপাহী-জনতার বিপ্লব ও গণতন্ত্রের পুনরাগমন।

ঘোষণাপত্রে স্পষ্টভাবে শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘকালীন শাসনকে “ফ্যাসিবাদী, গণবিরোধী ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী” আখ্যায়িত করা হয়েছে। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ছিল “প্রহসন” এবং এর মাধ্যমে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।

১৬ থেকে ১৮ নম্বর দফায় বর্ণিত হয়েছে কীভাবে ছাত্র আন্দোলনের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয় এবং তারই প্রেক্ষিতে “অদম্য গণবিক্ষোভ” গড়ে ওঠে। ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে পরিচালিত লংমার্চ ও গণভবনমুখী যাত্রার চূড়ান্ত পর্যায়ে শেখ হাসিনা “দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন” বলে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঘোষণাপত্র অনুযায়ী, অবৈধ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হওয়ার পর সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।

এছাড়া ২৫ ও ২৬ নম্বর দফায় ভবিষ্যতের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, জলবায়ু সহিষ্ণু ও টেকসই উন্নয়নমুখী রাষ্ট্রগঠনের দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্র ও তরুণ প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় “জাতীয় সংলাপ” অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নেবেন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, শ্রমিক সংগঠন ও ধর্মীয় নেতৃত্ব।

জুলাই ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। এটি শুধু অতীতের ভুল ও অগণতান্ত্রিকতার বিচার নয়; বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি গণতান্ত্রিক, ন্যায্য ও মানবিক রাষ্ট্রের রূপরেখা।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...