ছবি- সংগৃহীত
বিজ্ঞাপন
দেশজুড়ে বেহাত হওয়া ওয়াক্ফ সম্পত্তি উদ্ধারে বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ঘোষণা দিয়েছেন, এই অভিযান তিনি নিজেই সরাসরি নেতৃত্ব দেবেন। ইতিমধ্যেই উত্তরাঞ্চলের নওগাঁ জেলায় বেদখল হওয়া ৫২ বিঘা ওয়াক্ফ সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
গতকাল বুধবার (৬ আগস্ট) সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-কে দেওয়া এক বক্তব্যে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, "আগামী সপ্তাহ থেকেই চট্টগ্রাম, যশোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ধাপে ধাপে অভিযান শুরু হবে।"
তিনি আরও জানান, এসব অভিযানে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় পুলিশ ও র্যাব একযোগে অংশ নেবে। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
ড. খালিদ হোসেন বলেন, "ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে জনকল্যাণে যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ওয়াক্ফ করেছেন, সেগুলো দখলে রাখার কোনো অধিকার কারো নেই। এই সম্পত্তি সরকারের কাছে ধর্মপ্রাণ মানুষের পবিত্র আমানত। যেকোনো মূল্যে এই আমানত রক্ষা করা হবে।"
ধর্ম উপদেষ্টার মতে, ২০১৪ সালে সংসদীয় কমিটির তথ্য অনুযায়ী, ওয়াক্ফ প্রশাসকের কার্যালয়ে নিবন্ধিত সম্পত্তির মধ্যে ৮৫ হাজার ৫৭২ একর ভূমি বেহাত হয়ে আছে। বর্তমানে সারাদেশে নিবন্ধিত ওয়াক্ফ এস্টেট রয়েছে প্রায় ২২ হাজারটি, যেগুলোর আওতায় রয়েছে প্রায় চার লাখ ২৪ হাজার ৭৪ একর জমি।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মুসলিম সমাজে যুগ যুগ ধরে বিশ্বাসের ভিত্তিতে ওয়াক্ফ প্রথা চলমান। ১৯৩৪ সালে প্রথম বেঙ্গল ওয়াক্ফ অ্যাক্ট পাস হয় ব্রিটিশ আমলে। এরপর ১৯৬২ সালে পাকিস্তান আমলে এবং ২০১৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে সংশোধিত আইন পাস করা হয়।
উপদেষ্টা বলেন, "বাংলাদেশের অনেক বড় মসজিদ ও মাদ্রাসার ওয়াক্ফ সম্পত্তি রয়েছে, যেগুলো দখলে নিয়ে বছরের পর বছর ভোগ করা হচ্ছে। এসব সম্পত্তি পুনরুদ্ধারে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।"
তিনি আরও জানান, ওয়াক্ফ প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো হবে এবং সব ওয়াক্ফ সম্পত্তি ডিজিটাল ডেটাবেইসের আওতায় আনা হবে, যাতে কেউ অবৈধভাবে এসব জমি দখল করতে না পারে।
উপদেষ্টা বলেন, "অনেকে পূর্বপুরুষদের ওয়াক্ফ দলিলপত্র গোপন করে সম্পত্তি দখলে রেখেছেন। যেমন কেউ তার দাদার ওয়াক্ফ দলিল লুকিয়ে রেখেছেন। এটি খুঁজে বের করা কঠিন হলেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং কিছু সম্পত্তি ইতিমধ্যে প্রশাসনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, অনেক দখলদার আদালতে মামলা করে বছরের পর বছর ওয়াক্ফ সম্পত্তি ভোগ করছে। এ পরিস্থিতি নিরসনে হাইকোর্টে দুটি বিচারকের সমন্বয়ে একটি আলাদা বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে, যেখানে শুধুমাত্র ওয়াক্ফ সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি হবে।
সব মিলিয়ে দেশের ধর্মীয় সম্পদ রক্ষা এবং ধর্মপ্রাণ জনগণের আমানত ফিরিয়ে দিতে সরকার যে সক্রিয় হয়েছে, তা স্পষ্ট। এই উদ্যোগ সফল হলে দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থিতিশীলতা এবং ধর্মীয় কল্যাণমূলক কাজের গতিও বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
- এম কে
জনপ্রিয়
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...