বিজ্ঞাপন
এছাড়া প্রজননক্ষম বয়সী (১৫–৪৯ বছর) প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ বিবাহিত নারীর মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ নারী পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। এর মধ্যে ৫০ লাখ নারী কম ওজনে এবং ১ কোটি ২০ লাখ নারী অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর সমাধান হতে পারে ফুড ফোর্টিফিকেশন বা খাদ্য সমৃদ্ধকরণ।
বুধবার (১৩ আগস্ট) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদের ডিন সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে বৃহৎ পরিসরে ফুড ফর্টিফিকেশন’ শীর্ষক লার্নিং-শেয়ারিং কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শোয়েব।
তিনি জানান, ফুড ফোর্টিফিকেশন হলো এমন প্রক্রিয়া, যেখানে কোনো খাদ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণে এক বা একাধিক ভিটামিন বা খনিজ উপাদান মিশিয়ে তার পুষ্টিমান বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমানে রাইস ফোর্টিফিকেশনে ছয়টি পুষ্টি উপাদান—ভিটামিন এ, বি-১, বি-১২, ফোলিক এসিড, আয়রন ও জিংক সংযোজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভোজ্য তেলে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধকরণ নারীদের ও শিশুদের ভিটামিন-এ ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে।
ড. শোয়েব বলেন, “পুষ্টি উপাদান সরবরাহের মাধ্যমে বিভিন্ন বয়সী মানুষের অপুষ্টি সমস্যা সমাধান সম্ভব। তবে ফোর্টিফিকেশন শুরু করলেই হবে না—গুণগত মান, সঠিক ডোজ, নিরাপদ সংরক্ষণ ও মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করাও জরুরি। এজন্য প্রশিক্ষণ ও দক্ষ জনবল তৈরির বিকল্প নেই।”
বাকৃবির প্রফেসর মুহাম্মদ হোসেন কেন্দ্রীয় গবেষণাগার (পিএমএইচসিএল) এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (জিএআইএন)-এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন পিএমএইচসিএল পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আমির হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন সার্ক কৃষি সেন্টারের পরিচালক ড. মো. হারুনুর রশিদ এবং জিএআইএন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. রুদাবা খন্দকার। কর্মশালায় বিভিন্ন অনুষদের প্রায় ১১০ জন শিক্ষক ও গবেষক অংশ নেন।
উপাচার্য বলেন, “বাংলাদেশে অপুষ্টি একটি বড় জনস্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ। গবেষণালব্ধ প্রযুক্তি, সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা ও নীতি সহায়তার সমন্বয়ে ফুড ফোর্টিফিকেশন কর্মসূচিকে সফল করতে হবে। বাকৃবি এই বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।”
কর্মশালায় ‘অন্যান্য দেশে ফুড ফোর্টিফিকেশন ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিএআইএন-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. আবুল বাশার চৌধুরী। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে বৃহৎ পরিসরে খাদ্য ফোর্টিফিকেশন সফলভাবে বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব অপরিহার্য। নীতি, প্রযুক্তি ও জনসচেতনতা সমন্বিতভাবে কাজ করলে অপুষ্টি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।”
সূচনা বক্তব্যে বাকৃবির ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলজারুল আজিজ জাতীয় ফুড ফোর্টিফিকেশন কর্মসূচির অংশ হিসেবে একটি বিশেষ কেন্দ্র স্থাপন, কৌশলপত্র প্রণয়ন, খাদ্যমান নিয়ন্ত্রণ, বাজার তদারকি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
কর্মশালায় বক্তারা মত দেন, পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে অপুষ্টিজনিত রোগ কমানো এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ফুড ফোর্টিফিকেশন কর্মসূচি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রতিবেদক - মোঃ আমান উল্লাহ, বাকৃবি প্রতিনিধি।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...