বিজ্ঞাপন
১৪ আগস্ট রাতে পবিপ্রবির কবি বেগম সুফিয়া কামাল হলে, প্রভোস্টের উপস্থিতিতে ছাত্রীদের নিয়মিত সিট তদারকিতে সহকারী প্রভোস্টগণ যান। একইসাথে ইন্ডাকশন চুলা ও হিটার জব্দেও অভিযান চালানো হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ওই অভিযানে হলের এক পুরুষ ইলেকট্রিশিয়ান ছাত্রীদের রুমে প্রবেশ করেন, এমনকি একটি রুমের তালা ভেঙে প্রবেশ করা হয়। ঘটনাটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়।
শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলেছেন, র্যাগ ডে উপলক্ষে যখন অধিকাংশ ছাত্রী হলে ছিলেন না, তখনই কেন প্রভোস্টদের তদারকিতে আসতে হলো? অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, হলে নিম্নমানের খাবার ও ডাইনিংয়ের টোকেন সিস্টেমের কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে নিজেরাই রান্না করেন। এক ছাত্রী বলেন, “খাবারের মান ভালো হলে আমাদের ইন্ডাকশন ব্যবহার করতে হতো না। এতে সময়ও বাঁচত, পড়াশোনাতেও মনোযোগ দেওয়া যেত।”
এ প্রসঙ্গে ফিসারিজ অনুষদের ছাত্রী দিনা বলেন, “মেয়েদের হলে পুরুষের প্রবেশ কোনোভাবেই কাম্য নয়। ছাত্রীদের ব্যক্তিগত পরিসরে এভাবে পুরুষদের ঢোকানো অসম্মানজনক।”
পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্রী রুমালি বলেন, “শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য পুষ্টিকর খাবার অপরিহার্য। কিন্তু হলে খাবারের মান এত খারাপ যে বাধ্য হয়ে রান্না করতে হয়।”
“অনুষ্ঠানের দিনে তদারকি কেন?”—এমন প্রশ্নে কবি বেগম সুফিয়া কামাল হলের সহকারী প্রভোস্ট মোছা. নিলয় জামান শান্তা বলেন, “সকল শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে যায়নি, বেশ কিছু ছাত্রী হলে থাকায় আমরা গিয়েছিলাম নতুন শিক্ষার্থীদের সিট বরাদ্দ দেওয়ার জন্য রুম খালি আছে কি না তা খুঁজে দেখতে। এ সময় কিছু রুমে হিটার ও ইন্ডাকশন পাওয়া গেলে সেগুলো জব্দ করা হয়।”
রুমে তালা ভাঙা প্রসঙ্গে তিনি জানান, “একটি রুমে ছাত্রী থাকা সত্ত্বেও বাইরে থেকে তালা লাগানো ছিল। বারবার ডাকার পরও কোনো সাড়া না পেয়ে কোনো অঘটন ঘটেছে কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তালা ভাঙতে হয়। পরে জানা যায়, ওই ছাত্রী প্যানিক অ্যাটাকে ভুগছিল এবং তার কাছে চাবি ছিল না। জরুরি অবস্থায় তাকে হেলথকেয়ারে নিতে তালা ভাঙতে বাধ্য হয়েছিলাম।”
পুরুষ ইলেকট্রিশিয়ানের উপস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “হলে পুরুষ শিক্ষক বা কর্মচারী প্রবেশ করলে বাঁশি বাজানো হয়, যাতে ছাত্রীরা প্রস্তুতি নিতে পারে। ইলেকট্রিশিয়ানকে কেবল জব্দ করা হিটার ও ইন্ডাকশন খুলে আনার জন্য নেওয়া হয়েছিল, তাকে দিয়ে কোনো তল্লাশি করানো হয়নি।”
অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, “ইতোপূর্বে হলে ইন্ডাকশন বা হিটার জব্দ করার সময় কখনো পুরুষ কর্মচারীর প্রয়োজন হয়নি। পাশাপাশি এবার কোনো সতর্ক সংকেত (বাঁশি) দেওয়া হয়নি। এবারের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অযৌক্তিক।”
এমন সমালোচনার জবাবে সহকারী প্রভোস্ট নিলয় জামান শান্তা বলেন, “ছাত্রীদের নিরাপত্তা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেজন্য যেকোনো তদারকিতে আর পুরুষ কাউকে সঙ্গে নেওয়া হবে না।”
খাবারের নিম্নমান ও টোকেন সিস্টেম প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “খুব দ্রুতই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে এসব বিষয়ে আলোচনা করা হবে। খাবারের মান উন্নয়ন ও টোকেন সিস্টেম থাকা না থাকা বিষয়ে তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো: ইকতিয়ার উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “প্রশাসনিক কিছু কাজে আমি ক্যাম্পাসে না থাকায় এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে পারিনি। আমি ক্যাম্পাসে ফিরেই এ ব্যাপারে তদারকি করবো।”
সাধারণ শিক্ষার্থীরা সমস্ত ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি ও দ্রুত কার্যকর সমাধান আশা করেছেন।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...