Logo Logo

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন : উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচারণা শুরু


Splash Image

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ভয়হীন পরিবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আনুষ্ঠানিক প্রচার। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা— দীর্ঘদিনের লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির অবসান ঘটিয়ে শিক্ষা, গবেষণা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটবে এ নির্বাচনের মাধ্যমে।


বিজ্ঞাপন


মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) ভোটের প্রচার শুরুর প্রথম দিনেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আবাসিক হল, অনুষদ ও ইনস্টিটিউট এলাকায় প্রার্থীদের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ডে ছেয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট চাইতে প্রার্থীরা হলে হলে ও একাডেমিক ভবনে ঘুরে বেড়ান।

অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী নাদিয়া ইসলাম বলেন, “এখন একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করবেন— এমন প্রার্থীকেই আমরা বেছে নেব।”

ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জিহাদ আলী জানান, “ক্যাম্পাসে এসেছি মাত্র দুই মাস হলো। এসেই ডাকসু নির্বাচন পাচ্ছি— ভাগ্যবান মনে করছি। আগের সন্ত্রাসী পরিবেশ যেন আর না ফিরে আসে।”

বামপন্থী সাতটি সংগঠনের উদ্যোগে গঠিত ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রচার শুরু করে। ভিপি প্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি) ও জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসুর নেতৃত্বে প্যানেলটি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, টিএসসি ও কলা অনুষদ এলাকায় জনসংযোগ চালায়। সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ধরেন।

ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল ‘প্রতিশ্রুতি নয়, পরিবর্তনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’ স্লোগান নিয়ে ভিসি চত্বরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রচার শুরু করে। ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, “শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।”

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’, স্বতন্ত্র প্যানেল ‘শিক্ষার্থী ঐক্য’, ইসলামি ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’, ছাত্র অধিকার পরিষদ–সমর্থিত ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন–সমর্থিত ‘সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ’ এবং ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ’-এর প্রার্থীরাও পৃথকভাবে প্রচার চালান।

প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, ডাকসুর ২৮টি পদে মোট ৪৭১ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ভিপি পদে ৪৫ জন, জিএস পদে ১৯ জন ও এজিএস পদে ২৫ জন। সম্পাদকীয় ১২ পদে রয়েছেন ১৯২ জন এবং ১৩টি সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২১৭ জন।

এবার মোট ৬২ জন ছাত্রী প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ভিপি পদে ৫ জন, জিএস পদে ১ জন, এজিএস পদে ৪ জনসহ বিভিন্ন সম্পাদকীয় ও সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫২ জন।

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রথম স্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি ও প্রক্টরিয়াল টিম, দ্বিতীয় স্তরে পুলিশ এবং তৃতীয় স্তরে সাতটি প্রবেশমুখে সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে। ভোট শেষে ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র সেনাসদস্যরা ঘিরে রাখবেন।

আবাসিক হলে নির্বাচনের সাত দিন আগে থেকে কোনো বহিরাগত থাকতে পারবে না। নির্বাচনের আগের দিন (৮ সেপ্টেম্বর) ও ভোটের দিন (৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোরেল স্টেশন বন্ধ থাকবে। সেদিন বৈধ শিক্ষার্থী, অনুমোদিত সাংবাদিক ও নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।

প্রচারের প্রথম দিনেই চারুকলা অনুষদের সামনে ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’-এর ব্যানার ও ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটে। প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে এবং নারী প্রার্থীর ছবিও বিকৃত করেছে। এ ঘটনায় দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তাঁরা।

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, এ নির্বাচন হবে ভয়হীন ও স্বচ্ছ, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি প্রকৃত একাডেমিক ও গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...