বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে তাদের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়।
নির্বাচিতদের মধ্যে অন্যতম সিয়াম মোল্লা। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে তার নিজস্ব কোনো ভালো জামা ছিল না। বন্ধুর কাছ থেকে জামা ধার করে পরীক্ষা দিয়ে সিয়াম আজ স্বপ্ন পূরণের আনন্দ অনুভব করছেন। সিয়াম ফরিদপুর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের গোবিন্দপুর গ্রামের ছেলে। বাবা লাভলু মোল্লা পেশায় প্লাস্টিক কারখানার শ্রমিক। ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সিয়াম বলেন, “ছোটবেলা থেকে আমার স্বপ্ন ছিল পুলিশ হওয়া। শ্রমিক বাবার সঙ্গে কাজ করে পড়ালেখা করেছি। আজ আমার মেধাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে।”
নির্বাচিতদের মধ্যে একমাত্র নারী প্রার্থী তন্দ্রা আক্তার। বয়স মাত্র ১৮। তার বাবা মাহেন্দ্রচালক তোরাব বিশ্বাস। সংসারের টানাপোড়েন সত্ত্বেও তন্দ্রা নিজের স্বপ্ন আঁকড়ে ধরেছিলেন। তিনি বলেন, “সরকারি চাকরি পাওয়াটা আমার কাছে প্রায় অসম্ভব মনে হয়েছিল। আজ যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে পুলিশে চাকরি পেয়েছি। এটি আমার জীবনের সার্থকতা।”
চাকরি পাওয়া আরেকজন তামীম মন্ডল। তার বাবা ট্রাকচালক সুমন মন্ডল। নিয়োগ নিশ্চিত হওয়ার পর আনন্দে আবেগাপ্লুত তামীম বলেন, “মাত্র ২২০ টাকায় জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন পূরণ হলো। এ অনুভূতি ভাষায় বোঝানো যাবে না।”
ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, নতুন ২৩ জন পুলিশ সদস্য একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আছেন। কারও মুখে হাসি, কারও চোখে আনন্দের জল। কেউবা বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে আনন্দের কান্না করছেন। তবে সবার গল্প একই—অভাবের সঙ্গে লড়াই করে স্বপ্ন জয়।
ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় পুলিশের কনস্টেবল পদে আবেদন করেছিলেন ১,২১১ জন। লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ৩৪৩ জন। তাদের মধ্যে ২৮ জন উত্তীর্ণ হন। পরে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ২৩ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়।
নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও ফরিদপুর পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল বলেন, “আমরা কারও পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড দেখিনি। প্রত্যেকে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়েছেন। পুলিশের নিয়োগে কখনো অভিযোগ উঠে, তবে এ ক্ষেত্রে সকলেই যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়েছেন। অসহায়-দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের নিয়োগ দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।”
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...