তেলের দেশ ভেনেজুয়েলা: জ্বালানি সস্তা, রপ্তানি আয় নেই। ছবি- সংগৃহীত
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলা বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল ভান্ডারের অধিকারী। দেশটিতে প্রমাণিত তেলের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় পাঁচ গুণেরও বেশি। অথচ তেল রপ্তানি থেকে দেশটির আয় আশানুরূপ নয়, বরং ভয়াবহভাবে কমে গেছে।
২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ৪ বিলিয়ন ডলার। তুলনায় সৌদি আরব আয় করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন এবং রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
ভেনেজুয়েলার তেলের বড় অংশই রয়েছে পূর্বাঞ্চলের বিশাল অরিনোকো বেল্ট অঞ্চলে। তবে এখানকার তেল অতিভারী ও ঘন হওয়ায় তা উত্তোলন ও বাজারজাত করা কঠিন এবং ব্যয়বহুল। এই কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ভেনেজুয়েলার তেল অন্য দেশের হালকা ও মিষ্টি ক্রুডের তুলনায় কম দামে বিক্রি হয়।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি PDVSA-এর অব্যবস্থাপনা, জীর্ণ অবকাঠামো ও বিনিয়োগ ঘাটতি। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্নীতিও তেল খাতকে দুর্বল করেছে।
সবচেয়ে বড় ধাক্কা এসেছে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭ সাল থেকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রি ও বৈদেশিক বাজারে প্রবেশ প্রায় বন্ধ করে দেয়। একসময় যুক্তরাষ্ট্রই ছিল ভেনেজুয়েলার সবচেয়ে বড় ক্রেতা, কিন্তু এখন প্রধান ক্রেতা হয়ে উঠেছে চীন ও কিউবা। ভারতও ছিল বড় বাজার, তবে সাম্প্রতিক মার্কিন চাপের মুখে তারা ক্রয় কমিয়েছে।
২০২৫ সালের মার্চে পুনর্নির্বাচিত ট্রাম্প প্রশাসন নতুন আদেশে ঘোষণা দেয়—যে দেশ ভেনেজুয়েলার তেল কিনবে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের রপ্তানি পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। এর প্রভাব পড়েছে ভারতের বাজারে, তবে চীন এখনো নিয়মিতভাবে তেল আমদানি করছে।
তবে সব সংকটের মাঝেও সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা আশার আলো দেখা দিয়েছে। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি দৈনিক ৯ লাখ ব্যারেল ছুঁয়েছে, যা গত ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে নিষেধাজ্ঞার আগের সময়ের তুলনায় এই পরিমাণ এখনো অতি সামান্য।
দেশের অভ্যন্তরে পরিস্থিতি আরও বৈপরীত্যপূর্ণ। ভেনেজুয়েলায় জ্বালানির দাম পৃথিবীর সবচেয়ে কম দামের মধ্যে একটি—এক লিটার অকটেন বিক্রি হচ্ছে মাত্র ০.০৪ ডলারে। অথচ বৈশ্বিক বাজারে এর দাম লিটারপ্রতি গড়ে ১.২৯ ডলার।
অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল ভান্ডার নিয়েও ভেনেজুয়েলা তার প্রাপ্য অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করতে পারবে না। এখন পর্যন্ত তেল-সমৃদ্ধ দেশটির গল্প—“তেল আছে, আয় নেই।
সূত্র- আল জাজিরা
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...