Logo Logo

শুধু সোনালি আঁশ নয়, ফরিদপুরের কৃষকের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে ‘সোনালি কাঠি’


Splash Image

সোনালি আঁশের জন্য খ্যাত ফরিদপুর জেলা এখন শুধু পাটের জন্যই নয়, বরং পাটকাঠির জন্যও দেশ-বিদেশে চাহিদার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এক সময় রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া ও পানের বরজের ছাউনি তৈরিতে ব্যবহৃত এই পাটকাঠি আজ বিশ্ববাজারে দামী পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


ফরিদপুরের কৃষকরা জানাচ্ছেন, পাট উৎপাদনের খরচ যেভাবে বাড়ছে, বাজার মূল্যে সেই হারে বৃদ্ধি হয়নি। তাই পাট বিক্রি থেকে অনেকাংশে ক্ষতি সামলাতে পাটকাঠি বিক্রির দিকে নজর দিচ্ছেন তারা। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এখন পাটকাঠি পরিচর্যা ও বিক্রয়ের কাজ চলছেই।

জানা গেছে, পাটকাঠি বর্তমানে শুধু জ্বালানি নয়, বরং শিল্প ও কসমেটিকসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ছাই থেকে তৈরি হচ্ছে কার্বন পেপার, কম্পিউটার প্রিন্টার ও ফটোকপি মেশিনের কালি। এছাড়া আতশবাজি, ফেসওয়াশ, মোবাইল ব্যাটারি, প্রসাধনী, এয়ারকুলার, পানির ফিল্টার, জীবনরক্ষাকারী ওষুধ, সার উৎপাদন ও বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ তৈরিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

ফরিদপুরের সর্বোচ্চ পাট উৎপাদন উপজেলা হলো সালথা ও নগরকান্দা। সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রামের বাড়ি, পাকা সড়ক কিংবা মাঠ-ঘাটে চোখে পড়ে পাটকাঠি শুকানোর ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। একশ মুঠা পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে, প্রকারভেদ অনুযায়ী।

নগরকান্দা উপজেলার সাকপালদিয়া গ্রামের কৃষক জীবন কৃষ্ণ দাস জানান, তার ক্ষেতের পাটখড়ি তিন রকম বিক্রি হয়েছে – লম্বা ও শক্ত কাঠি ১০০ মুঠা ২০০০ টাকায়, মাঝারি ১২০০ টাকায় এবং নরম ও ছোট কাঠি ৮০০ টাকায়। অন্য কৃষক কলিম শেখ বলেন, “পাট বিক্রি থেকে লাভ সীমিত, কিন্তু পাটকাঠি বিক্রি করে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারছি।”

সালথা উপজেলার রসুলপুর গ্রামের কৃষাণী জোবেদা খাতুন জানালেন, নিজে হাতে পাট ছাড়িয়ে পাটকাঠি রোদে শুকিয়ে ১০০ মুঠা ১৬০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। তার গ্রামের অনেক নারী পাট আঁশ ছাড়ানো ও পাটখড়ি শুকানোর কাজ করে বাড়তি আয় করছেন।

পাটকাঠি ব্যবসায়ী সামাদ মাতুব্বর বলেন, “আগে রান্নার জ্বালানি ও ঘরের বেড়া তৈরিতেই ব্যবহৃত পাটকাঠি এখন আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে। বড় কোম্পানি ও ব্যবসায়ীরা গ্রাম থেকে কিনে নিচ্ছে। ফলে চাহিদা বেড়েছে।” সাতক্ষীরা এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ী মোস্তফা শেখ বলেন, “জেলায় অর্ধশতাধিক কার্বন ফ্যাক্টরি তৈরি হয়েছে। আগে কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করা যেত, এখন চাহিদা ও দাম উভয়ই বেড়েছে। অনেকেই পাটকাঠির ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।”

ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ৮৬,৫০০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ মেট্রিক টন পাটকাঠি উৎপাদিত হবে, যার বাজার মূল্য ৫০০ কোটি টাকার বেশি হবে। উপ-পরিচালক শাহাদউজ্জামান জানান, “ফরিদপুর দেশের সর্ববৃহৎ পাট উৎপাদনকারী জেলা। এ জেলায় পাটকাঠি পুড়িয়ে কার্বন উৎপন্ন করে চীনে রপ্তানি করা হয়। এছাড়া প্রিন্টের কালি ও কসমেটিকসের কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে। আমরা রপ্তানি বাজার আরও সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে কৃষকরা আরও বেশি পাট চাষে উৎসাহিত হন।”

ফরিদপুরের পাটকাঠি এখন শুধু গ্রামীণ অর্থনীতির পরিবর্তন ঘটাচ্ছে না, বরং কৃষকের আয় বৃদ্ধি ও বিশ্ববাজারের সঙ্গে সংযোগের পথও খুলছে। পাটকাঠি চাষের এই নতুন দিগন্তে কৃষকরা এখন নিজেদের ‘সোনালি কাঠি’ নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...