Logo Logo

ফরিদপুরে নৌকাবাইচ ও মেলার নামে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অভিযোগ


Splash Image

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ ও মেলা আয়োজনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর উপজেলার শেখর ইউনিয়নের তেলজুড়িতে এ মেলা ও নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু এই আয়োজনের নামে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ নেতাদের পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি ও সাধারণ স্থানীয়রা।


বিজ্ঞাপন


স্থানীয়দের অভিযোগ, মেলায় প্রধান অতিথি করা হয়েছে ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার সাবেক সভাপতি আজিজুল আকিল ডেভিড শিকদারকে, যিনি শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। বিশেষ অতিথি করা হয়েছে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য খন্দকার ওমর হাফিজ মুক্তিকে। তবে মেলার পোস্টারে রাজনৈতিক পরিচয় আড়াল করে তাঁদের ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। উদ্বোধক হিসেবে নাম রয়েছে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরীর।

উপজেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. রোকনুজ্জামান মিয়া বকুল বলেন, “নৌকাবাইচের মাইকিংয়ে দেখছি ডেভিড শিকদারকে প্রধান অতিথি করা হয়েছে। তিনি গত ১৭ বছর আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।”

তিনি অভিযোগ করেন, আয়োজক কমিটির সভাপতি রইসুল ইসলাম পলাশ অতীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন মুসা মিয়ার নির্বাচনী প্রচারে কাজ করেছেন। “ডেভিড শিকদারকে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করে কার্যত আওয়ামী লীগকেই পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে,” বলেন রোকনুজ্জামান।

শেখর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হওয়া সত্ত্বেও ওই মেলা কারা মেলাচ্ছে, কীভাবে করছে, কিছুই জানি না। ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে আমার নাম পোস্টারে থাকা তো দূরের কথা, আমন্ত্রণও পাইনি। এটা খুবই দুঃখজনক।”

মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি রইসুল ইসলাম পলাশ জানান, তিনি ১৯ বছর উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি ও বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। “আমরা তো ক্ষমতায় আসতে পারলাম না, তার আগেই যদি এলাকার লোকজনকে বাদ দিয়ে মেলা করি, সেটা কেমন দেখায়? তাই সবার সঙ্গে আলাপ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোনো রাজনীতিবিদকে রাখার বিষয়ও ছিল না,” বলেন তিনি।

রইসুল আরও বলেন, “কে কী বলল, তাতে আমাদের বা মেলার কোনো কিছু যায় আসে না। মেলা করার আগে সবাইকে সঙ্গে নিয়েই সিদ্ধান্ত হয়েছে। পোস্টারেও কারও রাজনৈতিক পদবি দেওয়া হয়নি।”

আজিজুল আকিল ডেভিড শিকদার দাবি করেন, “এ মেলাটি দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী। এটি কোনো রাজনৈতিক মেলা নয়। আমি স্থানীয় ছেলে, একজন ব্যবসায়ী। এজন্যই আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “গত সরকারের আমলে স্থানীয় সাবেক এমপি খন্দকার নাসির, রইসুলসহ বিএনপির নেতাদের সঙ্গে আমার বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছিল। তাহলে কেন একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে?”

স্থানীয় সূত্র জানায়, ডেভিড শিকদার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদারের চাচাতো ভাই। তিনি বিয়ে করেছেন বরিশাল-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ফুফাতো বোনকে। এই সম্পর্কের সুবাদে তিনি শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত হন। আওয়ামী লীগ আমলে প্রভাবশালীদের ব্যবহার করে বড় বড় ঠিকাদারি কাজও বাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় এই নৌকাবাইচ ও মেলাকে ঘিরে ইতোমধ্যে উপজেলাজুড়ে রঙিন পোস্টার টানানো হয়েছে এবং চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। তবে রাজনৈতিক পুনর্বাসনের অভিযোগের মধ্যেই এই আয়োজন ঘিরে স্থানীয় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...