Logo Logo

কোটালীপাড়ায় ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরনো ভবনের নিলাম নিয়ে তোলপাড়, নিলাম বাতিলের দাবীতে বিক্ষোভ ও ইউএনও'র কাছে অভিযোগ


Splash Image

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অকেজো ভবন নিলাম নিয়ে চলছে তোলপাড়। নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে নিলাম সম্পন্ন হওয়ায় ও দরপত্র শিডিউল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে বিক্ষোভ করেছেন ঠিকাদারেরা। নিলাম বাতিল চেয়ে ইউএনও'র কাছে লিখিত অভিযোগের পরও নিলাম বাতিলের কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিক্ষুদ্ধরা।


বিজ্ঞাপন


গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অকেজো ভবন নিলাম নিয়ে চলছে তোলপাড়। নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে নিলাম সম্পন্ন হওয়ায় ও দরপত্র শিডিউল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে বিক্ষোভ করেছেন ঠিকাদারেরা। নিলাম বাতিল চেয়ে ইউএনও'র কাছে লিখিত অভিযোগের পরও নিলাম বাতিলের কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিক্ষুদ্ধরা।

এদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নিলাম হলেও কোন তথ্য প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট না থাকায় বিষয়টি হাস্যকর এ পরিণত হয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, তারাকান্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আশুতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামিলা সরকারি প্রাথামিক বিদ্যালয়, সোনাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪টি পুরাতন ভবন ও পুরাতন ভবনের পরিত্যক্ত মালামাল নিলাম দেওয়ার জন্য গত ০৭ অক্টোবর দরপত্র আহ্বান করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্ত। এ উপলক্ষে ১২ ও ১৩ অক্টোবর প্রতিটি ভবনের জন্য আলাদা আলাদা নিলাম মূল্য নির্ধারণ করে অফেরৎ যোগ্য ১ হাজার টাকার বিনিময়ে নিলাম শিডিউল বিক্রি করা হয় উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে।

উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের অফিস সহায়ক তাওহিদুল ইসলামের কাছ থেকে জামিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে ১শত ১টি প্রতিষ্ঠান, সোনাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে ১শত ১টি প্রতিষ্ঠান, আশুতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়লয়ের বিপরীতে ৯৬টি প্রতিষ্ঠান ও তারাকান্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপরীতে ৯১টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রের সিডিউল ক্রয় করেন।

শিডিউল বিক্রি সংক্রান্ত কোন তথ্য দিতে পারেননি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্ত। তার কাছে শিডিউল বিক্রির তথ্য চাওয়া হলে তিনি জানান বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের অফিস সহায়ক তাওহিদুল ইসলাম জানেন। অন্যদিকে তাওহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন শিক্ষা অফিসার জানেন। বিষয়টি এখন হাস্যকর -এ পরিণত হয়েছে।

প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য ৩০ হাজার টাকার পে-অর্ডার সহ ১৯ অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে সংরক্ষিত বাক্সে দরপত্র জমা নেওয়া হয় এবং ৪ ঘটিকায় উপজেলা প্রকৌশলীর উপস্থিথিতে টেন্ডার বাক্স ওপেন করেন নিলাম কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্ত।

টেন্ডার বাক্স ওপেন করলে দেখা যায় ৩৮৯টি দরপত্র শিডিউলের মধ্যে ৬টি প্রতিষ্ঠানের নামে মাত্র ১৮ টি দরপত্র জমা হয়।

টেন্ডার বাক্সে নিজেদের দরপত্র না পেয়ে বিক্ষুদ্ধ হয়ে দরপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করেন কয়েকজন ঠিকাদার। এ সময় তারা নিলাম বাতিলের দাবী জানান।

সাবেক ইউপি সদস্য সবুর শেখ বলেন বিএনপির কয়েকজন নেতা আমাদের কাছ থেকে শিডিউল নিয়ে যায়। তারা বলেন বেশি ভিড় করা যাবে না। আমরা শিডিউল জমা দিয়ে দিবো। পরে তারা আর আমাদের শিডিউল জমা দেয় নাই। নিলাম হওয়ার পরে উপজেলা পরিষদ ভবনের পাশে একটি কালো ব্যাগে আমাদের সকলের শিডিউল ফেলে রেখে যায় তারা।

কোটালীপাড়া উপজেলা নাগরিক পার্টির যুগ্ম সমন্বয়ক নাজমুল দাড়ীয়া বলেন, আমি দরপত্র জমা দিতে গেলে আমার হাত থেকে দরপত্র জমা দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যায় বিএনপির এক নেতা। পরে যখন বাক্স ওপেন করা হয় তখন বাক্সের ভিতর আমার দরপত্র না দেখে আমি অবাক হই। কিছু ব্যক্তি এই নিলামকে সিন্ডিকেট করেছে।

বিক্ষুদ্ধরা অভিযোগ করেন, কিছু ব্যক্তি নামমাত্র মুল্য দেখিয়ে সিডিউল জমা দিয়েছেন। পরে কয়েকগুন বেশি দামে বিক্রি করে দেওয়ার পায়তারা চলছে। এভাবে সরকারি ভবন নামমাত্র টাকায় নিলামে বিক্রি করায় সিন্ডিকেটধারীরা হচ্ছে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। আর সরকার হারাচ্ছে কাঙ্খিত রাজস্ব। আমরা এই নিলাম বাতিলের জন্য বিক্ষোভ করেছি এবং ইউএনও স্যারের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছি।

নিলামসূত্রে জানাযায়, জামিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের জন্য ক্রয়কৃত ১০১টি শিডিউলের মধ্যে জমা পড়ে ৫টি। শিডিউল। এর মধ্যে ২ টি শিডিউলে কোন দর উল্লেখ করা হয়নি। সোনাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১শত ১টি বিক্রিত শিডিউলের মধ্যে জমা পড়ে ৬টি শিডিউল। এর মধ্যে ১টি শিডিউলে কোন দর উল্লেখ করা হয়নি। আশুতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়লয়ের ৯৬টি বিক্রিত শিডিউলের মধ্যে জমা পড়ে ৫টি শিডিউল। এর মধ্যে ১টি শিডিউলে কোন দর উল্লেখ করা হয়নি। তারাকান্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯১টি বিক্রিত শিডিউলের মধ্যে জমা পড়ে ২টি শিডিউল। এর মধ্যে ১টি শিডিউলে কোন দর উল্লেখ করা হয়নি। অন্য শিডিউলে সরাকরি মূল্যের চেয়ে দর কম থাকায় তারাকান্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিলাম বাতিল করা হয়। অন্য ৩টি বিদ্যালয়ে সর্ব্বোচ দরদাতাকে নিলাম প্রাপ্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপরই উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন দরপত্র নিলাম বাক্সে জমা না দিতে পারা ব্যক্তিরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিএনপির কয়েকজন ব্যক্তি সিন্ডিকেট করে ৩৮৯টি শিডিউলের মধ্যে ৬টি প্রতিষ্ঠানের নামে মাত্র ১৬টি শিডিউল জমা দেয়। এর মধ্যে ৪টি সিডিউলে কোন দর দেওয়া হয়নি। তারা ইচ্ছেমত দর দেন। সরকারি মূল্যের সঙ্গে নামমাত্র মূল্য যোগ করে তাদের নামে টেন্ডার বের করেন। পরে নিজেদের মধ্যে ও নেগোসিয়েশন করে উচ্চমূল্যে বিক্রি করেন।

গোপনসূত্রে জানাযায়, নিলামের পরদিন ২০ অক্টোবর বিকালে জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে জেলা পরিষদের কোটালীপাড়ার সদস্যের কক্ষে বসে উচ্চমূল্যে ভবনগুলো বিক্রি হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, শিক্ষা অফিসার বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবন ও মালামাল বিক্রিতে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছেন। এটা উন্মুক্ত নিলাম নাকি দরপত্র তা স্পষ্ট নয়। নিলামে সাধারণত মাইকিং করাসহ প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। এখানে যেহেতু এসব করা হয়নি বরং প্রতিটি সিডিউল এক হাজার টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছে, তাই এটাকে নিলাম বলা যাচ্ছে না। আবার, যেহেতু পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি, পিপিআর নিয়ম মানা হয়নি, কাজেই এটি দরপত্রও বলা যাবে না। এটি মূলত শিক্ষা অফিসার ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়ে নির্দিষ্ট কাউকে ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছেন। শুধুমাত্র উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের দেয়ালে নামসর্বস্ব একটি নোটিস দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের সুবিধা দিতে উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজে বিংবা উপজেলা শিক্ষা অফিসের ও উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ ব্যাপারে কোন কিছু প্রকাশ করা হয়নি। ফলে অনেক ব্যবসায়ী ‍নিলামে অংশ নিতে পারেনি। অন্যদিকে আগে এসব দরপত্র মূল্য ২০০ থেকে ৩০০ টাকা অফেরতযোগ্য রাখা হলেও এবার দরপত্র মূল্য রাখা হয়েছে ১০০০ টাকা। হঠাৎ করে দরপত্র মূল্য বৃদ্ধি করায় ব্যবসায়ীরা হতবাক হয়েছেন।

অন্যদিকে উপজেলা শিক্ষা দপ্তরের নিলামের সিডিউল উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের একজন অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত অফিস সহায়ক তাওহিদুল ইসলাম কিভাবে বিক্রি করেন এবং আর্থিক বিষয় দেখভাল করেন এ নিয়েও ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার শেখর রঞ্জন ভক্ত ও উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের অফিস সহায়ক (অস্থায়ী) তাওহিদুল ইসলাম ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়েই অতি গোপনে নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন বলে জানান তারা। অতি দ্রুত এ অবৈধ নিলাম বাতিলের দাবিও জানান তারা।

উপজেল শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্ত বলেন, আমরা নিয়মমাফিকভাবেই নিলাম আহ্বান ও নিলাম কার্যক্রম পরিচালনা করি। তবে বাহির থেকে কেউ কোন অনিয়ম করছে কিনা তা আমাদের জানা নেই।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাগুফতা হক বলেন, নিলামের বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ এনে কয়েকজন আমার নিকট দরখাস্ত করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...