বিজ্ঞাপন
অভিযোগ রয়েছে, গত পনের মাস ধরে অস্ত্রধারী চাঁন্দা ডাকাতের সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে জিম্মি ছিল উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা। বিশেষ করে গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তার বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে তিনি আলোচনায় আসেন।
গ্রেপ্তারকৃত চাঁন্দা ডাকাত উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চর আলাউদ্দিন গ্রামের মোজাম সর্দার বাড়ির আব্দুল বাতেনের ছেলে এবং মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক দিদারের ভাই।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে র্যাব-১১, সিপিসি-৩ নোয়াখালী ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার ও সহকারী পুলিশ সুপার মিঠুন কুমার কুণ্ডু তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আলআমিন বাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব-১১ জানায়, চাঁন্দা ডাকাত এলাকায় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে নিরীহ এলাকাবাসীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে জুলুম, নির্যাতন ও চাঁদাবাজী করে আসছিল। অস্ত্র ও গুলি ব্যবহার করে বিভিন্ন দাঙ্গা-হাঙ্গামা ঘটানোর উদ্দেশ্যে সে আগ্নেয়াস্ত্র হেফাজতে রেখেছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে চাঁন্দা ডাকাত মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে নির্বিচারে চাঁদাবাজি, খামারের গরু, মহিষ, মাছ লুট করে প্রায় কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। একই সাথে, এই ইউনিয়ন মাদক কারবারিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। একসময়ের শান্তির জনপদ মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন এখন অশান্তি ও সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। তাদের মতে, মাদক ও অবৈধ অস্ত্রধারীদের অস্ত্রের ঝনঝনানিতে স্থানীয় বাসিন্দারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে জীবনযাপন করছেন।
৫ আগস্টের পর মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে চাঁন্দা ডাকাত বাহিনী, ফারুক বাহিনী এবং মাদক কারবারি তোতলা বাহিনীর আবির্ভাব হয়। চাঁন্দা ডাকাত বাহিনী ও ফারুক বাহিনী সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতা তোতলা বাহিনী জমজমাট মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে। এই বাহিনীগুলোর মধ্যে চাঁন্দা ডাকাত ও ফারুক বাহিনীর কাজ ছিল স্থানীয় লোকজনের খামার থেকে গরু, মহিষ, ও মাছ লুট করে অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়া। আর তোতলা বাহিনী চট্টগ্রাম সংলগ্ন সন্দ্বীপ উপজেলা সংলগ্ন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উড়িরচর থেকে নদীপথে মাদকের চালান মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ঘাট দিয়ে এনে সুবর্ণচর উপজেলা, সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করত।
মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আলাউদ্দিন অভিযোগ করেন, চাঁন্দা ডাকাত ও কালাম মাঝির ভাই মো. ফারুক মাঝি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন চৌধুরী ও তার ভাইদের খামার থেকে ২০টি মহিষ, ২৬টি গরু এবং বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে কোটি টাকার মাছ ও ক্ষেতের ধান লুট করে নিয়ে গেছে। খামারের লোকজন অস্ত্রের ভয় ও প্রাণভয়ে বাঁধা দিতে পারেননি।
এসব বাহিনীগুলোর ভয়ে এলাকাছাড়া ছিলেন অনেক মানুষ। এমনকি রাজনৈতিক সংযোগের কারণে পুলিশও তাদের ভয় পেত এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে পুলিশের ব্যাপক অনীহা ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে।
র্যাব হেফাজতে থাকায় অভিযুক্ত চাঁন্দা ডাকাতের কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও চাঁন্দা ডাকাতের ভাই মো. দিদার বলেন, "আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি চুরির অভিযোগও নেই। ষড়যন্ত্র করে আমার ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ইউনিয়নে কোনো বাহিনী নেই।"
র্যাব-১১, সিপিসি-৩ নোয়াখালী ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার ও সহকারী পুলিশ সুপার মিঠুন কুমার কুণ্ডু আরও জানান, এছাড়াও গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে চরজব্বর ও হাতিয়া থানায় হত্যার চেষ্টাসহ অন্যান্য মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসামি ও উদ্ধারকৃত অস্ত্র-গুলির বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...