Logo Logo

ট্রাম্প-সি বৈঠক: বাণিজ্যযুদ্ধে ‘নাজুক যুদ্ধবিরতি’


Splash Image

ছবি : ফক্স নিউজ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিন পিংয়ের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠককে ‘অসাধারণ’ বলে মন্তব্য করেছেন এবং ১০-এর মধ্যে ‘১২’ নম্বর দিয়েছেন। তবে ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুই নেতার এই সমঝোতাকে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের একটি ‘নাজুক যুদ্ধবিরতি’ হিসেবেই দেখছেন। তাদের মতে, এই চুক্তির মাধ্যমে উত্তেজনা সাময়িকভাবে কমলেও যে মূল সমস্যাগুলো নিয়ে এই সংকটের শুরু, তা এখনো অমীমাংসিতই রয়ে গেছে।


বিজ্ঞাপন


বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুই পক্ষের মধ্যে এই সমঝোতা হয়। নতুন কাঠামো অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক ১০ শতাংশ কমাবে। এর বিনিময়ে চীন আবারও মার্কিন সয়াবিন কেনা শুরু করবে এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ‘বিরল খনিজ’ (Rare Earth Minerals) রপ্তানিতে এক বছরের জন্য নিয়ন্ত্রণ স্থগিত রাখবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি কার্যত দুই দেশের সম্পর্ককে ট্রাম্পের ‘লিবারেশন ডে’ ঘোষণার পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। চলতি বছরের ২ এপ্রিল ট্রাম্প এই ‘লিবারেশন ডে’ ঘোষণা করে চীনের ওপর ব্যাপক বাণিজ্যিক শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যাকে তিনি ‘যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা’র সূচনা বলে দাবি করেন।

বৈঠকের পর বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ওয়াশিংটন যা চায় এবং বেইজিং যা দিতে প্রস্তুত, তার মধ্যে মৌলিক অমিলগুলো রয়েই গেছে। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের মূল কারণ—যেমন চীনের রাষ্ট্রীয় শিল্পনীতি, অতিরিক্ত উৎপাদন এবং রপ্তানিনির্ভর প্রবৃদ্ধি মডেল—এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনায় অনুপস্থিত ছিল।

নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি সেন্টারের পরিচালক এমিলি কিলক্রিজ বলেন, “আসলে আমরা কী নিয়ে কথা বলছি? আমরা কেবল দুই পক্ষের নেওয়া পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপগুলো কমানোর ব্যাপারে কথা বলছি।” অর্থাৎ, মূল সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি।

এই বৈঠকের ফলাফলে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট সি জিন পিং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মোকাবিলায় এক নতুন বাস্তববাদী পদ্ধতি নিয়েছেন। চীনা কর্মকর্তারা জানতেন, এই বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কে মৌলিক পরিবর্তন আসবে না। তবে ট্রাম্পের ইতিবাচক মনোভাব এবং বৈঠকটিকে ‘জি-টু’ বা দুই পরাশক্তির বৈঠক হিসেবে উপস্থাপন করা নিয়েই তারা সন্তুষ্ট। বেইজিং এই বৈঠককে সম্পর্ক স্থিতিশীল করার বৃহত্তর আলোচনার একটি সোপান হিসেবে দেখছে।

দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের পর দুই নেতার উষ্ণ বৈঠক এবং আগামী বছর ট্রাম্পের বেইজিং সফরের প্রতিশ্রুতিকে বাণিজ্যযুদ্ধের মাঝে থাকা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য কিছুটা স্বস্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বৈঠক শেষে ট্রাম্প উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে সি জিন পিং-কে ‘এক মহান দেশের মহান নেতা’ বলে প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “দুই বিশ্বশক্তির এমনভাবেই পরস্পরের সঙ্গে আচরণ করা উচিত।”

তবে এই কৌশলগত যুদ্ধবিরতি উভয় পক্ষকে কেবল কিছুটা সময় দিচ্ছে। চীনের বিরল খনিজ রপ্তানির ওপর নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি বাতিল হয়নি, কেবল বিলম্বিত হয়েছে। ট্রিভিয়াম চায়নার ভূরাজনীতি বিশ্লেষক জো মাজুর বলেন, “এখন পরিষ্কার, বিরল খনিজই চীনের মূল প্রভাবের অস্ত্র, যার জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলনীয় কোনো শক্তি বা বিকল্প নেই।” বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, মূল সমস্যাগুলোর সমাধান না হলে এই উত্তেজনা বারবার ফিরে আসবে এবং দুই নেতার ব্যক্তিগত আস্থাও ফুরিয়ে যেতে পারে, যা বিশ্বকে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি করবে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...