Logo Logo

ববিতে 'অধ্যাপক' পদে পদোন্নতি নিয়ে ইউজিসির আপত্তি, ভিসি যেনো নাছোড়বান্দা


Splash Image

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) ২৪টি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি নিয়ে অডিট আপত্তি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সম্প্রতি ইউজিসির বাজেট টিম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে মোট ১৭টি বিষয়ে আপত্তি তোলে।


বিজ্ঞাপন


এর মধ্যে ৬টি আপত্তি পদোন্নতি ও নিয়োগ সংক্রান্ত এবং ৪টি রেজিস্ট্রার সংক্রান্ত। তবে ইউজিসির এসব আপত্তি উপেক্ষা করেই অধ্যাপক পদে পদোন্নতির বোর্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ অক্টোবর থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতির বোর্ড শুরু হয়। ইতিমধ্যে অধিকাংশ বিভাগের বোর্ড সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল (১ নভেম্বর) উদ্ভিদবিজ্ঞান ও ইতিহাস বিভাগের পদোন্নতি বোর্ডের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শেষ হবে।

এর আগে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ খ্যাত কিছু শিক্ষকের অধ্যাপক পদে পদোন্নতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি ইউজিসির নজরে আসে। পরবর্তীতে গত ২২ অক্টোবর ইউজিসি বাজেট টিম পাঠায়। তারা ১৭টি বিষয়ে অডিট আপত্তি জানিয়ে বিভিন্ন খাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ স্থগিত করে।

ইউজিসির অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদনবিহীনভাবে প্রভাষক নিয়োগ, পদ না থাকা সত্ত্বেও অধ্যাপক পদে আপগ্রেডেশন, দৈনিক ভিত্তিতে কর্মচারী নিয়োগ, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতি নীতিমালায় অসংগতি এবং অনিয়মিত পর্যায়োন্নয়ন হয়েছে।

এছাড়া রেজিস্ট্রার সম্পর্কিত আপত্তিতে বলা হয়েছে—রেজিস্ট্রার অধ্যাপক হয়েও সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য কেন, তিনি আবাসিক কর্মকর্তা হয়েও ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন কেন এবং ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে ইউজিসি।

ইউজিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২৪টি অধ্যাপক পদের বিপরীতে ইউজিসির অনুমোদন রয়েছে মাত্র ২টি শূন্যপদের। বাকি পদগুলো অনুমোদনবিহীনভাবে আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে পূরণ করা হয়েছে। এমনকি অনুমোদিত ৯টি অধ্যাপক পদের মধ্যে ৭টি ব্লক করে প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা নিয়মবহির্ভূত।

চলতি বছরের ৭ জুলাই প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১০ জন প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয়, যার মধ্যে ৬টি পদের আর্থিক ও প্রশাসনিক অনুমোদনই ছিল না। অবশিষ্ট ৪টি পদে ইউজিসির অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও নির্ধারিত অর্থবছরে নিয়োগ সম্পন্ন না করায় নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের পদোন্নতির সুবিধার্থে উপাচার্য তড়িঘড়ি করে আরও ১০টি প্রভাষক পদে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। এর আগে ২০২৪ সালের ৬ মার্চ ও ২ জুন দুই দফায় মোট ৫১টি প্রভাষক পদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

আটকে গেল ১০ কোটি টাকা

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ছিল প্রায় ৬৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমে ৫৪ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ইউজিসির আপত্তির কারণে প্রায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ আটকে গেছে।

আটকে দেওয়া খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে—অনুমতিহীন দৈনিক মজুরি কর্মচারীদের জন্য ৮৪ লাখ, বিআরটিসি বাস ভাড়া বাবদ ১ কোটি ৭২ লাখ, আবাসিক ভবন ভাড়া ১৪ লাখ ৫০ হাজার, আউটসোর্সিং ১০ লাখ, শ্রমিক মজুরি ৮ লাখ, আনসার নিয়োগে ৯০ লাখ, পরিবহন ব্যয় ২ কোটি ৭৬ লাখ এবং যৌন হয়রানি প্রতিরোধসহ বিভিন্ন কমিটির কার্যক্রমে ২১ লাখ টাকা।

ববির অর্থ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ইউজিসির তিন সদস্যের বাজেট অডিট টিম হঠাৎ গত ২২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। আপত্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ওয়ার্কিং কমিটি জবাব দিলেও তা ইউজিসি গ্রহণ করেনি।

ববির উপপরিচালক (অর্থ ও হিসাব) আতিকুর রহমান বলেন, “ইউজিসির রিপোর্ট উপাচার্যের কাছে আছে, কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কেন ১০ কোটি টাকা আটকে গেছে—এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবেন।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম বলেন, “ইউজিসি যা বলবে সেটা আমরা মানতে বাধ্য। তবে আমরা এখনো কোনো লিখিত অডিট আপত্তি পাইনি। লিখিতভাবে পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অডিট আপত্তি থাকলে ইউজিসির সঙ্গে বৈঠক হবে, তখন সমাধান বের করা হবে।”

প্রতিবেদক- মেঃ আশিকুল ইসলাম, ববি প্রতিনিধি।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...