Logo Logo

বোয়ালমারীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ২৫


Splash Image

৭ নভেম্বরের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা সদরের পরিস্থিতি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে অন্তত ২০টি মোটরসাইকেলে, হামলার শিকার হয়েছে একটি শপিং কমপ্লেক্সও। প্রায় দেড় ঘণ্টা উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির পর পুলিশ ও সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণে আনে এলাকা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দুটি ভাগে বিভক্ত। একপক্ষে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলামের অনুসারীরা, অপরপক্ষে উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সমর্থকরা। গত মাসে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে তাদের দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে।

৭ নভেম্বর উপলক্ষে উভয় পক্ষ পৃথক কর্মসূচি ঘোষণা করলে শুক্রবার সকাল থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসন আশঙ্কা করে আগেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে। বিকেল ৪টার দিকে দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে শহরে প্রবেশ শুরু করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে।

নাসিরুল ইসলামের সমর্থকরা মহিলা কলেজ মোড়ে ও পৌর বাস টার্মিনাল এলাকায় অবস্থান নেন, অন্যদিকে ঝুনু মিয়ার সমর্থকরা ওয়াপদা মোড়ের কাজী হারুন শপিং কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে ঝুনু মিয়ার পক্ষ থেকে ইটপাটকেল ছোড়া হলে উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশের উপস্থিতি সত্ত্বেও সংঘর্ষ চলতে থাকে, পরে একপক্ষ পিছু হটলে অপরপক্ষ শপিং কমপ্লেক্সের সামনে থাকা প্রায় ১৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এ সময় শপিং কমপ্লেক্সে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় এবং আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসের গাড়িকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর মাগরিবের নামাজের পর পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সংঘর্ষে আহত ১৫ জনের মধ্যে গুরুতর তিনজন—লিয়াকত হোসেন, মিনহাজুর রহমান লিপন ও রফিকুল ইসলামকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও আটজন।

শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু অভিযোগ করে বলেন, “নাসিরুল ইসলামের সমর্থকরা বহিরাগত লোক এনে অতর্কিত হামলা চালায়, পার্টি অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। আমাদের শান্তিপূর্ণ সভায় হামলা চালিয়ে বহু নেতাকর্মীকে আহত করেছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।”

অন্যদিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম দাবি করেন, “ঝুনু মিয়ার অনুসারীরাই প্রথম হামলা চালায়। তারা সালথা ও নগরকান্দা থেকে ভাড়াটে লোক এনে আমাদের ওপর হামলা করে ও মোটরসাইকেলে আগুন দেয়।”

তিনি আরও বলেন, “ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করছি। দলের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব।”

বোয়ালমারী থানার ওসি মাহমুদুল হাসান জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

উল্লেখ্য, বোয়ালমারী উপজেলা ফরিদপুর-১ আসনের অন্তর্ভুক্ত। এ আসনে বিএনপির দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী—খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। গত ৩ নভেম্বর বিএনপি ২৩৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও ফরিদপুর-১ আসনে এখনও কাউকে মনোনয়ন দেয়নি।

দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ অক্টোবর ঘোষিত উপজেলা ও পৌর বিএনপির নবগঠিত কমিটিতে নাসিরুল ইসলামের অনুসারীরা প্রাধান্য পেয়েছেন, ফলে ঝুনু মিয়ার পক্ষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। কমিটি বাতিলের দাবিতে তারা একাধিক বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। তবে শুক্রবারই প্রথমবার সরাসরি সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ।

সংঘর্ষের পর সন্ধ্যায় সাতৈর বাজারে সংবাদ সম্মেলন করেন খন্দকার নাসিরুল ইসলামের পক্ষের নেতাকর্মীরা।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আজ আমাদের বিকেলের নির্ধারিত কর্মসূচিতে প্রতিপক্ষ ঝুনু গ্রুপ পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। তাদের মিছিল থেকে জয় বাংলা ও নারায়ে তাকবিরের শ্লোগান দিয়ে আমাদের ওপর হামলা হয়। প্রশাসনের কাছে আমরা ঘটনার সঠিক তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দাবি করছি।”

সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় সাহা, পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস শেখ, সাধারণ সম্পাদক মো. ইমরান হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...