বিজ্ঞাপন
রবিবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মো. মুসা ছিলেন ঠাকুরগাঁও গণমাধ্যমকর্মী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য এবং বাংলাদেশ বেতার ঠাকুরগাঁও কেন্দ্রের অনিয়মিত শিল্পী ও গিটার বাদক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সংবাদকর্মী হিসেবেও কাজ করেছেন। সঙ্গীত ও সংবাদ—উভয় ক্ষেত্রেই ছিল তার একনিষ্ঠ উপস্থিতি।
ঠাকুরগাঁওয়ের সাংবাদিক মহলে নেমেছে গভীর শোকের ছায়া। হঠাৎ প্রিয় সহকর্মী মুসার চলে যাওয়া যেন কেউ বিশ্বাসই করতে পারছে না। তার মৃত্যুতে ঠাকুরগাঁও বেতার কেন্দ্রসহ জেলার বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে।
ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুৎফর রহমান মিঠু বলেন, “আবু মুসা ভাই ছিলেন সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতিচর্চার এক নিবেদিত প্রাণ মানুষ। তিনি কখনো নিজের প্রাপ্তি নিয়ে ভাবেননি, বরং সমাজ ও মানুষের জন্য কলম চালিয়েছেন, সুর তুলেছেন। তার হাসিমুখ, শান্ত স্বভাব আর সত্যের প্রতি অটল অবস্থান আমাদের জন্য প্রেরণার উৎস ছিল। আজ সেই প্রেরণার বাতিঘর নিভে গেল।”
ঠাকুরগাঁও গণমাধ্যমকর্মী কল্যাণ ট্রাস্টের সভাপতি জিয়াউর রহমান বকুল বলেন, “মুসা ভাই শুধু সহকর্মী ছিলেন না, ছিলেন আমাদের পরিবারের একজন। তার হাসিমুখ, বন্ধুসুলভ আচরণ সবই এখন স্মৃতি। এমন মানুষ খুব কম দেখা যায়, যার মধ্যে ছিল এতটা ভালোবাসা, আন্তরিকতা আর শিল্পচেতনা।”
সাধারণ সম্পাদক রেদওয়ানুল হক মিলন স্মৃতিচারণ করে বলেন, “ফেসবুকে স্ট্যাটাসটি দেখেছিলাম—‘ফিরতে চাই, আহারে বাড়ি’। ভাবিনি, সেই কথাই হবে তার জীবনের শেষ বার্তা। আমরা সবাই স্তব্ধ, বাকরুদ্ধ। মুসা ভাই ছিলেন পরিশ্রমী ও নীরব সংগ্রামী সাংবাদিক। একদিকে সংবাদ, অন্যদিকে বেতারের গিটার হাতে তার অবদান ছিল অনন্য। তার মতো সহৃদয় মানুষের মৃত্যু আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।”
ঠাকুরগাঁও বেতার কেন্দ্রের শিল্পী কল্প বর্ধন বলেন, “রিহার্সালের ঘরে এখনো যেন তার গিটারের সুর বাজে। মুসা আমার মামা হবে। তিনি কখনো কারও মন ভাঙেননি, বরং সবার মন জুড়িয়েছেন। আজ সেই সুর নীরব, কিন্তু তার স্মৃতি আমাদের ভেতরে চিরজীবী হয়ে থাকবে।”
সহকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, “মুসা ভাইকে যদি সময়মতো সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হতো, আজ হয়তো তিনি আমাদের মাঝে বেচে থাকতেন। ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলায় তার মূল্যবান জীবন অকালে ঝরে গেল। একজন রোগী যখন হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছিলেন, তখন দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকের উদাসীনতা মানবিকতার চরম অবমাননা।”
অন্য সাংবাদিক মিনহাজ বলেন, “এটা কেবল একজন মানুষের মৃত্যু নয়, এটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নির্মম চিত্র। একজন পরিচিত সংবাদকর্মী, বেতারের শিল্পী এমনভাবে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাবেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না। হাসপাতালের এই অব্যবস্থা ও অবহেলার বিচার চাই।”
খোকন নামে এক সহকর্মী যোগ করেন, “চিকিৎসা নিতে এসে যেন মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে—এমন চিত্র আমরা বারবার দেখছি। এবার সেই নির্মমতা ছুঁয়ে গেল আমাদের সহকর্মীকে। আমরা প্রশাসনের কাছে জবাব চাই, কেন সময়মতো চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না?”
সোমবার (১০ নভেম্বর) সকাল ১১টায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সেনুয়া কবরস্থানে তার দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...