বিজ্ঞাপন
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র্যাব যৌথ অভিযান শুরু করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্টের যেকোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে। পুলিশের নির্দেশে আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর সব থানাকে টহল, নজরদারি ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই দিনই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা এক মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।
প্রথম বিস্ফোরণ ঘটে ভোররাতে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে—যার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম যুক্ত। মিরপুর মডেল থানার ওসি সাজ্জাদ রোমান জানান, মোটরসাইকেলে আসা দুই ব্যক্তি ভবনের সামনে ককটেল নিক্ষেপ করে দ্রুত পালিয়ে যায়। একই সময় মোহাম্মদপুরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানে একই কায়দায় হামলা চালানো হয়।
ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টার ও ইবনে সিনা হাসপাতালের দিকেও চারটি ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। সন্ধ্যায় মৌচাক, আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ বেতার ভবন, খিলগাঁও ফ্লাইওভার এলাকা এবং মিরপুর শাহ আলী মার্কেট সংলগ্ন স্থানে আরও বিস্ফোরণ ঘটে। রাত ১০টার দিকে ফ্লাইওভার থেকে আবারও ককটেল নিক্ষেপের খবর পাওয়া যায়।
দিনের শেষ বিস্ফোরণটি ঘটে রাত ১১টা ১০ মিনিটে, বাংলামোটরে এনসিপি কার্যালয়ের সামনে। এতে এক পথচারী সামান্য আহত হন। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব মুশফিক উস সালেহীন জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়রা মোটরসাইকেল চালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় দুইজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন; পরে আরও তিনজনকে আটক করা হয়।
পুলিশি সূত্র জানায়, আগের দিন কাকরাইলের সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রাল ও মোহাম্মদপুরের সেন্ট জোসেফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকদের বাসভবনের সামনে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছিল। একই রাতে শাহজাদপুর ও মেরুলবাড্ডায় দুটি বাসে অগ্নিসংযোগ এবং ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে আরেকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডিএমপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকার আশপাশে সব ধরনের জনসমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনাসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) জানিয়েছে, হামলায় জড়িতদের শনাক্তে তারা পাল্টা গোয়েন্দা তৎপরতা চালাচ্ছে। ডিবি প্রধান শফিকুল ইসলাম জানান, আওয়ামী লীগের কিছু কর্মী প্রকাশ্যে বলেছেন—তারা তাদের নেতাদের জন্য ‘যেকোনো কিছু’ করতে প্রস্তুত। এই বক্তব্যের সূত্র ধরে সোমবার পৃথক অভিযানে আড়াই ডজনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আরও জানিয়েছে, ককটেল হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২৮ বছর বয়সী এক ছাত্রলীগ সদস্যকেও ডিএমপি আটক করেছে। সরকার জানিয়েছে, ধর্মীয় সম্প্রীতি ও জননিরাপত্তা রক্ষায় তারা অটল থাকবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রতিটি চেষ্টা দ্রুত ও কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে; জননিরাপত্তা, জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সুরক্ষা আমাদের অগ্রাধিকার।”
রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও বিএনপি–ঘনিষ্ঠ একটি সংগঠন আগামী ১৩ নভেম্বর ‘ঢাকা লকডাউন’ ঘোষণা করেছে। এই প্রেক্ষাপটে রাজধানীতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নিরাপত্তা সভায় সব থানাকে টহল, অতিরিক্ত আলোকসজ্জা, সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ ও জরুরি প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রেলওয়ে, মেট্রো ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামোতেও বাড়ানো হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...