Logo Logo

থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে নিখোঁজ কলেজ শিক্ষিকা, কাঁদছে ১১ মাসের শিশুকন্যা


Splash Image

১১ মাসের শিশুকন্যাকে স্বামীর কাছে রেখে কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন ফরিদপুর সিটি কলেজের শিক্ষিকা সাবজান নাহার। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ। গত ২১ অক্টোবর সকাল থেকে তাঁর খোঁজ মিলছে না। কোলের দুধের শিশুর কান্নায় এখন স্তব্ধ হয়ে আছে পুরো পরিবার।


বিজ্ঞাপন


এ ঘটনায় তাঁর স্বামী রাজা মিয়া ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে জানতে পারেন, নিখোঁজ হওয়ার আগে উল্টো তাঁর বিরুদ্ধেই থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে গেছেন তাঁর স্ত্রী সাবজান নাহার।

নিখোঁজের ২০ দিন পার হলেও এখনো সাবজান নাহারের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। আত্মীয়স্বজনের বাড়ি, কর্মস্থলসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

পুলিশ জানায়, কলেজ শিক্ষিকা সাবজান নাহার নিখোঁজ হওয়ার দিনই তাঁর স্বামী রাজা মিয়ার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। তার আগে তিনি কর্মস্থল থেকে এক মাসের ছুটি নেন। এসব তথ্য তাঁর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় নতুন করে রহস্যের জন্ম দিয়েছে।

সাবজান নাহার তাঁর অভিযোগে উল্লেখ করেন, চার বছর আগে রাজা মিয়ার সঙ্গে বিয়ের পর সংসারের সব খরচ তিনিই বহন করতেন। দুই মাস আগে বিদেশে যাওয়ার জন্য রাজা মিয়া তাঁর কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেন। পরে বুলগেরিয়া যাওয়ার জন্য আরও ১৭ লাখ টাকা দাবি করেন। এক মাসের মধ্যে ওই টাকা না দিলে তাঁকে খুন করার হুমকি দেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, রাজা মিয়া নিয়মিত মাদক সেবন করেন এবং টাকা না দিলে গালিগালাজ ও শারীরিক নির্যাতন চালাতেন। স্বামীর ভয়ে সাবজান নাহার তাঁর বৃদ্ধা মাকে ঢাকায় বোনের বাসায় পাঠিয়ে দেন। এরপর থেকেই তিনি প্রাণনাশের আশঙ্কায় ছিলেন।

অন্যদিকে, রাজা মিয়া থানায় দায়ের করা জিডিতে বলেন, তাঁদের বিয়ে হয় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ২১ অক্টোবর সকাল ১১টার দিকে মেয়েকে রেখে বের হয়ে যান সাবজান নাহার। তাঁর দাবি, স্ত্রী বিদেশে যাওয়ার জন্য জমানো ১০ লাখ টাকা সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন। রাজা মিয়া দাবি করেন, তিনি জানতে পেরেছেন, তাঁর স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে অন্য এক পুরুষের সঙ্গে পালিয়ে গেছেন।

ঢাকায় অবস্থানরত সাবজান নাহারের বোন শিপন জানান, নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে বোনের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়েও কোনো তথ্য মেলেনি।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, সাবজান নাহারের অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে। তবে ওই কর্মকর্তা একাধিকবার তাঁর মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন; ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আত্মীয়স্বজন বা পরিচিতজনের মাধ্যমেও তাঁর অবস্থান জানা যায়নি। ফলে বিষয়টি এখন পুলিশের কাছে এক রহস্যে পরিণত হয়েছে।

জানা গেছে, কলেজ শিক্ষিকা সাবজান নাহার ফরিদপুর রেলস্টেশনের পাশের একটি ফ্ল্যাটে স্বামী রাজা মিয়া ও তাঁদের ১১ মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে থাকতেন। রাজা মিয়া তাঁর তৃতীয় স্বামী। আগের দুটি বিবাহের ঘরে তাঁর আরও দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। তবে ওই দুই মেয়ের সঙ্গেও তিনি আর যোগাযোগ রাখেননি। দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে জন্ম নেওয়া মেয়েটি বর্তমানে একটি এতিমখানায় প্রতিপালিত হচ্ছে।

মাতৃদুগ্ধবঞ্চিত শিশুটির বিষয়ে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য আবরার নাদিম ইতু বলেন, “স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্বে নিরীহ শিশুটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মায়ের স্নেহ-মায়া পাওয়ার অধিকার তাঁর রয়েছে। এখন শিশুটির সঠিক যত্ন নিশ্চিত করা জরুরি।”

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন বলেন, “সাবজান নাহারের অভিযোগ তদন্তের জন্য একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। একইসঙ্গে তাঁর স্বামীর করা জিডিটিও তদন্তাধীন রয়েছে। পুরো বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।”

প্রতিবেদক- রবিউল হাসান (রাজিব), ফরিদপুর।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...