Logo Logo

কোটালীপাড়ায় থানার ভেতরে ককটেল হামলা, তিন পুলিশ সদস্য আহত


Splash Image

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাত দশটার দিকে সংঘটিত হয়েছে চাঞ্চল্যকর ককটেল হামলা। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর রাত গভীর হতেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়, আর সেই প্রেক্ষাপটেই কোটালীপাড়া থানার ভেতরে দুষ্কৃতিকারীরা ককটেল নিক্ষেপ করে।


বিজ্ঞাপন


থানার পিছন দিক থেকে ছোড়া ককটেলের শক্তিশালী বিস্ফোরণে আহত হন তিন পুলিশ সদস্য—আইরিন নাহার, আরিফ হোসেন ও নজরুল ইসলাম।

আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, তিনজনই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন এবং তারা আপাতত শঙ্কামুক্ত।

একই সময় উপজেলা পরিষদের সামনের রাস্তায়ও দুটি বিস্ফোরণ ঘটে, যা পুরো এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। রায়ের দিনব্যাপী অস্বস্তিকর পরিস্থিতির পর রাতের এই হামলা স্থানীয়দের মধ্যে নতুনভাবে উদ্বেগ তৈরি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জে এমন হামলা পরিস্থিতিকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছে। থানার ভেতরে হামলা শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ নয়, বরং এটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক বার্তা হতে পারে বলেও মন্তব্য করছেন তারা।

বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে পুলিশ। থানাপ্রাঙ্গণ ও উপজেলা পরিষদ এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ, রাতেই চিরুনি অভিযান এবং সন্দেহজনক স্থানগুলোতে তল্লাশি শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অন্ধকারের সুযোগে থানা ভবনের তুলনামূলক অরক্ষিত পিছনের অংশকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয় এবং হামলাকারীরা সম্ভবত একই পথ দিয়েই পালিয়ে যায়।

কোটালীপাড়া থানার ওসি বলেন, “থানার পিছন থেকে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে আমাদের তিনজন সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাটিকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। হামলাকারীদের শনাক্তে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।” তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং পরিকল্পিত হামলা।

তদন্তকারীরা মনে করছেন, উপজেলা পরিষদের সামনের রাস্তায় বিস্ফোরণ ঘটানো হতে পারে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার কৌশল। এতে পুলিশ বাহিনীর মনোযোগ বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং হামলাকারীরা সহজেই থানার পেছনের অংশে হামলা চালানোর সুযোগ পায় কি না—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ঘটনার পর পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়, শুরু হয় মোটরসাইকেল ও সন্দেহজনক যানবাহনে তল্লাশি। স্থানীয়রা জানান, কোটালীপাড়ায় থানার ভেতরে এর আগে এমন হামলার ঘটনা ঘটেনি; ফলে এটি অভূতপূর্ব এবং অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন— হামলার আগে এলাকার রেকি করা হয়েছিল কি না, হামলাকারীরা কারা, এবং দুই স্থানে একযোগে বিস্ফোরণ কোনো বৃহত্তর পরিকল্পনার ইঙ্গিত বহন করে কি না। এসব প্রশ্নের জবাবই নির্ধারণ করবে আগামী দিনের নিরাপত্তা কৌশল।

কোটালীপাড়ায় রাতের এই ককটেল হামলা শুধু একটি বিস্ফোরণ নয়— এটি রাজনৈতিক উত্তেজনা, নিরাপত্তা হুমকি এবং প্রশাসনিক সতর্কতার এক নতুন মাত্রা। এলাকায় এখনও টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ বলছে, দুষ্কৃতিকারীরা যতই পরিকল্পিত হোক, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...