ছবি : সংগৃহিত
বিজ্ঞাপন
প্রতিটি মামলায় শেখ হাসিনাকে ৭ বছর করে মোট ২১ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মামলার অন্যান্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেন।
পৃথক তিন মামলায় আসামির সংখ্যা ৪৭। তবে ব্যক্তি হিসাবে আসামির সংখ্যা ২৩। প্রথম মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১২ জন, দ্বিতীয় মামলায় শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৭ জন এবং তৃতীয় মামলায় শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জন।
এসব মামলায় আত্মসমর্পণ করে কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত রবিবার রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন আদালত। অপর আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়নি। তারা আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করতে পারেননি।
উল্লেখ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সাত সদস্য ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চলতি বছরের জানুয়ারির ১৪ তারিখ পৃথক মোট ছয়টি মামলা করে দুদক। ছয়টি মামলায় মোট আসামি ৪৭ জন। এই মামলাগুলোর তিনটিতে আজ রায় ঘোষণা করা হলো। বাকি ৩টি মামলায় ১ ডিসেম্বর রায় ঘোষণা করা হবে। ওই তিন মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও শেখ পরিবারের অন্য আসামিরা হলেন-শেখ রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক।
শেখ পরিবার ছাড়া ৬ মামলার অন্য আসামিরা হলেন, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুদকের মামলা দায়েরের পর তদন্তের তদন্ত কর্মকর্তা আফনাত জান্নাত কেয়াকে তদন্তের জন্য নির্ধারণ করা হয়। পরে এ তদন্ত কর্মকর্তা চলতি বছর মার্চের ১০ তারিখ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলমসহ মোট ২৩ জন পৃথক আসামির বিরুদ্ধে তিন মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর ৩১ জুলাই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।
অভিযোগ গঠনের পর, মামলার প্রধান অভিযুক্ত শেখ হাসিনাসহ পরিবারের সকল সদস্য এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা আদালতে অনুপস্থিত থাকেন এবং সেই থেকেই তারা পলাতক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। তবে আসামি রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ২৯ অক্টোবর আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যান। এরপরে একমাত্র কারাগারে আটক আসামি হিসেবে তিনি নিয়মিতভাবে আদালতের কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন।
তিনটি পৃথক মামলায় দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়াসহ মোট ৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত । তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে তার সংগৃহীত তথ্য-প্রমাণাদি উপস্থাপন করে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণের চেষ্টা করেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তদন্তকারী কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া কে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাপক জেরা করে তার তদন্তের ত্রুটিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেন।
এছাড়াও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা একমাত্র আত্মসমর্পণকারী আসামি খুরশীদ আলমকে শুধুমাত্র হুকুমের গোলাম প্রমাণের চেষ্টা করেন। তারা আদালতে বলেন, তিনি শুধুমাত্র সরকারের চাকরি করতেন। সেখানে তিনি শুধু হুকুম পালন করেছেন।
মামলা তিনটিতে আদালতে ১৭ থেকে ২০ নভেম্বরের মধ্যে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানান। অন্যদিকে আসামিপক্ষ মামলাটিকে হয়রানিমূলক দাবি করে করেন । আগামীকাল আদালতের রায়ের মাধ্যমে পূর্বাচল প্লট দুর্নীতির এই পৃথক তিন মামলার আইনি সমাপ্তি ঘটবে বলে আশা করছেন রাষ্ট্রপক্ষ।
মামলার অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, সরকারের প্রধানমন্ত্রী পদে থাকাকালে শেখ হাসিনা তার পরিবার ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের নামে প্লট বরাদ্দ নেন। যেখানে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আসামিদেরকে প্রভাবিত করা হয় । তারা বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নং রাস্তার তিনটি ১০ কাঠার মোট ৩০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেন।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...