Logo Logo

কবি হাফসা আক্তার কলি’র প্রেম ও দ্রোহের একগুচ্ছ কবিতা


Splash Image


বিজ্ঞাপন


‎কোথায় তুমি ......!

‎কোথায় তুমি, বলো প্রিয়?

‎হিয়ার অন্তর-অন্তরালে?

‎নাকি চিন্তার গোপন ঘরে

‎ মগজের ধূসর আঁধার জালে?

‎না কি তুমি শিরার ধ্বনিতে,

‎রক্তের রুদ্ধ স্রোতে! যেন তুমি আমাতে মিশে আছো

‎ আর আমি হারাই তুমাতে।

‎তুমি কি সত্যি তুমি, প্রিয়.....

‎নাকি আমিই তোমাতে ভাসি?

‎ভালোবাসার দূর নক্ষত্রে

‎ নাকি আমিই তোমার আকাশি?

‎কত রজনী, কত ভোরের, শিশির-ছোঁয়া নীল বাতাস

‎ সবই যেন তোমার প্রত্যাশায়

‎ দাঁড়িয়ে থাকে অনুপম উদাস।

‎কোন ভাষা দেব, কোন শব্দে বলবো

‎ তোমার প্রেমের মান?

‎অনুভূতিরা আজ ক্লান্ত বড় !

‎ব্যথায় সুর বাঁধে, সেই ব্যাথায়

‎ ও সুখে অবিরাম .....।

‎এক দৃষ্টি—শুধু তোমারি দৃষ্টি,

‎যে চোখে আমার চোখ ডোবে;

‎নির্বাক স্রোতে হারায় প্রাণ

‎ গভীর নদীর মতো ভেবে।

‎বলবে কি, প্রিয়, তোমার বুকে

‎ কি এমন সুধা-দহন আছে?

‎আমি কেন বারবার ডুবে যাই

‎ তোমার নীরব প্রেম অনুরাগে?

‎তুমি যদি দুঃখ দাও এক কণা,

‎আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বেদনাহত; তুমি যদি হাসো

‎ আমি হই সকল সুখের প্রথম অভিযাত্র।

‎কী এই টান, এই মনভেজা ব্যাকুলতা...

‎ এই হারিয়ে যাওয়া-খুঁজে পাওয়া?

‎ নাকি এ-ই প্রেমের নির্জন সত্য

‎ দূরে সরে গিয়েও আরও কাছে যাওয়া?

‎২।

‎সমর্পণ

‎কোন অর্পিত স্বপ্নের ছায়ায় দগ্ধ এই জীবন?

‎কোন অজানা কণ্ঠে ডাকিছে নীরবতার উপকূলে?

‎যে প্রহরে হাসি মুখে রাখি সূর্যের আবেশ,

‎সেই প্রহরেই হৃদয় ভিজে ওঠে গোপন অশ্রুবেশ।

‎কি হারালাম? কি পেলাম?

‎আমার সমস্ত প্রাপ্তি—আমারই প্রতারণা।

‎যাহার শোকে মঞ্চে দীপ জ্বালি,

‎তাহার মুখে দেখি মায়ার ছদ্মবেশ।

‎তবু না মুখ ফিরাই,

‎চাহি তার শূন্য দৃষ্টির অন্তরদেশ;

‎আকাশের নীলতায় একা হেসে বলি,

‎"হে অনামা, তুমি হীনা এই অন্ধকার

‎তবু তোমারি নামে দীপ জ্বালি।

‎তোমারি শূন্যে যেন আমার আরাধনা।”

‎যাহার তরে জীবন ক্ষয়িল,

‎তাহা নির্লিপ্ত বলিল—

‎"ভ্রান্ত স্রোতে ফেলিয়া ছো নৌকা,

‎ভালোবাসা জলে নয়, কূলে ডুবে।”

‎আমি তবু নতশির, ফেলি দীর্ঘ শ্বাস,

‎বলিতে পারি মৃদু স্বরে—

‎ওহে প্রাণনাথ,

‎অল্প হলেও পাইয়াছি তুমার আবেশ।

‎এক দুঃখরথে যাত্রী আমি অনির্বাণ,

‎গন্তব্য তাহার নিরবতার আজান।

‎এই দুঃখই যদি হয় তব সান্তনা,

‎আমি তাহাতেই করিবো প্রার্থনা।

‎যদি তুমি পাও প্রশান্তির দান,

‎তব, সুখে আর করিব না স্নান!

‎৩।

‎শূন্যে আশা

‎কত সহস্র অপেক্ষার সন্ধিক্ষণ .......

‎অপেক্ষায় অপেক্ষায়িত

‎ হল না অবসান!

‎ শূন্যে - আশায় থাকি -

‎তাই হয়নি দেখা আর।

‎পথের ও পথ থাকে -

‎সেই পথে যদি পথিক না হাঁটে -

‎ প্রকৃতিতে হারায় তার স্থান।

‎ হলনা আর সেই ক্ষণে, পথচলা !

‎ কেটেছে গৌরে সারা সন্ধ্যা বেলা।

‎ সময়ের বিপরীতে এসে

‎ কিছু ধরা যায় না।

‎ সময় গেলে আর সাধন হয় না।

‎ খেলা বুঝো, লীলা বুঝো, শিলা বুঝো,

‎ বুঝনা শুধু এই অব্যাক্ত মনের

‎ যন্ত্রণার মেলা।

‎৪।

‎অন্ত-নির্বাস

‎ হাফসা

‎অন্তরেতে জ্বলে আগুন, বাইরে নীরব হাসি,

‎নিজেকেই নিজে দিই প্রতিদিন কারাদণ্ডে ফাঁসি।

‎ইটের দেয়াল নয়, এই বুকই কারাগার,

‎যেখানে স্বপ্নগুলো মরে যায় বারেবার।

‎আলো আঁধারে জেগে ওঠে দ্বন্দ্বের ঢেউ,

‎কামনার শিখায় জ্বলে বিবেকের কেউ।

‎হিন্দু-মুসলিম নাম শুধু ছায়া,

‎ভালোবাসা তবু কাঁদে—ধর্মেরই মায়া।

‎প্রেমের নামে আসে প্রতারণার দাগ,

‎বুকে শূন্যতা রেখে যায় জ্বালাময় ফাঁক।

‎সন্ন্যাসীর চোখে জেগে ওঠে অশ্রু,

‎সন্ন্যাসিনীর বুকে লুকায় ভালোবাসার বস্তু।

‎কামনা আর বৈরাগী—দুই নদীর স্রোত,

‎মিলতে চায় বুকে, তবু খুঁজে না পথ।

‎অন্তরের কণ্ঠে শোনে ভাঙা সুর,

‎মুক্তির ডাক, তবু বাঁধে শিকল দূর।

‎ধর্মের নামে কেবল আঁধারের রাজ,

‎মানুষের বুকেই জ্বলে মানবতার লাজ।

‎হিন্দুর অশ্রু, মুসলিমের আর্তনাদ,

‎একই স্রোতে ভাসে, তবু ভাগ করে সমাজ।

‎আলো যদি সত্যি হয় মুক্তির প্রতীক,

‎তবে কেন আঁধারে হারায় হৃদয়ের স্নিগ্ধ রঙচীক?

‎প্রেম যদি সত্যিই হয় স্রষ্টার নাম,

‎তবে কেন প্রতারণায় দগ্ধ হয় প্রাণ?

‎আমি বৈরাগী হয়েও শুনি হৃদয়ের গান,

‎সন্ন্যাসিনী হয়েও কাঁদি প্রেমের টান।

‎কামনা আর করুণা মিলিয়ে দেয় রক্ত,

‎প্রেমের শপথ কেন ভাঙে নিষ্ঠুর শক্ত?

‎তবুও -

‎শূন্যের..... শূন্যতায়- অন্তর নিরবধি

‎যেখানে স্পর্শ নেই ,অসীম থাকে

‎যেখানে আলো ,ছায়া লুকায়

‎যে পথ চেনে-ও ,অস্থিরতা থাকে

‎সব চাওয়া সত্বেও , রহস্য থাকে।

‎৫।

‎নিয়তির কলঙ্ক-

‎ হাফসা আক্তার

‎তোমার আর্তনাদ শুনি-

‎আমার অন্তর কাঁপে রণরণি ।

‎শত ক্ষত শত দহন বুকে ,

‎তবুও টেনে চলি সেই অজানা সুখে।

‎ব্যাথার পাহাড় বুকে চাপা -

‎ভেবেছিলাম এ যন্ত্রণা যাবে কভূ থামা ।

‎কিন্তু যতই পুড়েছি আগুনে -

‎ ততই ডুবে গেছি অন্তহীন শূন্যতায় গুনে।

‎ডাকো তুমি ফিরে যাওয়ার কূলে!

‎অমূল্যে সেই দিনের রুদ্রমূলে;

‎তবু -হে প্রিয়,

‎ বুঝবে কি বলি ?

‎জীবন এখন দহনে হাতে

‎জ্বলে ওঠে শত অনলবনিতে!

‎ চাইনি কলঙ্ক, চাইনি অশ্রু

‎চেয়েছিলাম স্নেহের অল্প রোদ্র;

‎কেন তবে নিয়তি আমায় দিল

‎ এক মহাসমুদ্র ধার!

‎কেন নিয়তি দিল আমায় কেবলি শূন্যতা

‎ফুটায় তুলল ব্যাথার বাঞ্ছনা!

‎পথে পথে শিকল জড়ায় আমার প্রাণ

‎ভুলের পর ভুল ডুবে গেছে জীবন গান ।

‎কিভাবে বলি জ্বলে অন্তর অগ্নিকুণ্ডলী

‎দিনরাত সে দহন মুছতে চায় না কভু চলি।

‎তবুও প্রশ্ন রয়ে যায় হৃদয়ের গভীরে -

‎আমার কি তবে কিছুই নেই ভাগ্য সমুদ্র তীরে?

‎শূন্য তাতেই কি ভেসে যাবে জীবনধার?

‎তবে কি জন্মেই আমার চরম ভ্রান্তি?

‎তোমার দেওয়া নামই হলো নিয়তির মায়াজলান্তি।

‎"কলি” বলে স্নেহে দিয়েছিলে নাম,

‎ভেবেছিলে সে নামেই ফুটবে জীবনের ঘ্রাণ।

‎হায়, জাননি আমি সে নামেই বাঁধা হলো জাল,

‎এক জীবনের দুঃখগাথা, কলঙ্কের কাল।

‎---০০০---

‎সংক্ষিপ্ত কবি পরিচিতিঃ

‎হাফসা আক্তার কলি, পিতা কবি মো: হাফিজুর রহমান তালুকদার ও মাতা নূর ফাতেমা। গ্রাম: রানাহিজল, থানা: মোহনগঞ্জ, জেলা: নেত্রকোনা

‎জন্ম ২৫ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে নিজ গ্রামে।

‎হাফসা আক্তারের বিদ্যালয়জীবন শুরু হয় স্থানীয় পালগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে, যেখান থেকে তিনি ২০১৬ সালে এসএসসি পাশ করেন। পরে ২০১৮ সালে বারহাট্টা টেকনিক্যাল কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। উচ্চশিক্ষার ধারাবাহিকতায় মোহনগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে ২০২৫ সালে ডিগ্রি পরীক্ষার সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি একটি স্বনামধন্য বেসরকারি হাসপাতালে মেডিকেল ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত।

‎কবি হাফসা শৈশব থেকেই লেখালেখির প্রতি গভীর অনুরাগ। তাঁর বাবাও একজন কবি, তিনি সবসময় তাকে অনুপ্রাণিত করে বলতেন— তোমার লেখা কখনো থামিও না।” বাবার সেই সাহস আর প্রিয় মানুষের দেওয়া সুখুদুঃখ আজ তার লেখার শক্তি ও প্রেরণা। তার ঐকান্তিক ইচ্ছা ও স্বপ্ন ‎তিনি লিখতে চান মানবের তরে, লিখে যেতে চান সভ্যতার অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...