বিজ্ঞাপন
মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রান্তে পাকিস্তানি বাহিনী কামালপুর সীমান্ত ঘাঁটিকে শক্ত করে গড়ে তোলে। এ ঘাঁটির মাধ্যমে তারা ত্রিশাল, হাতীভাঙ্গা, দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছিল। তাদের মোকাবিলায় দায়িত্ব পায় বাংলাদেশের ১১ নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
৪ ডিসেম্বর ভোরে সুপরিকল্পিত আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা কামালপুর–ধানুয়া এলাকাজুড়ে তীব্র লড়াই শুরু করেন। প্রায় কয়েক ঘণ্টার সম্মুখ যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়।
কামালপুর যুদ্ধের বীরদের বেশিরভাগই ছিলেন স্থানীয় যুবক। কারো বয়স তখন ১৮, কারো ২২, কেউ ৩০-এর কোঠায়। দেশমাতৃকার টানে তারা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেন।
এক প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ (তৎকালীন বয়স প্রায় ২৩) জানান— “সামনেই ছিল পাকবাহিনীর বাঙ্কার। গুলি এদিক–ওদিক উড়ছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ার কথা কেউ ভাবেনি। দেশ স্বাধীন করার সংকল্পই আমাদের শক্তি ছিল।”
কঠোর যুদ্ধ শেষে ৪ ডিসেম্বর বিকেল নাগাদ মুক্তিযোদ্ধারা ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে প্রথম স্বাধীনতার লাল–সবুজ পতাকা উত্তোলন করেন। স্থানীয় জনতার উপস্থিতিতে পুরো এলাকা তখন ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।
স্বাধীনতার সংবাদ মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম–পাড়া–মহল্লায়। নারীরা ঘর থেকে বের হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল দিয়ে বরণ করেন। কেউ মুক্তির আনন্দে কাঁদছিলেন, আবার শহীদের স্মরণে বুকভাঙ্গা আর্তনাদ ছড়িয়ে পড়ে অনেকের মাঝে। ৪ ডিসেম্বর তাই বকশীগঞ্জবাসীর কাছে বিজয় ও বেদনার মিশ্র এক স্মৃতি।
ধানুয়া–কামালপুরের যুদ্ধ ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে প্রতি বছর ৪ ডিসেম্বর স্থানীয় প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও জনসাধারণ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। আলোচনা সভা, র্যালি, স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ—সব মিলিয়ে এ দিনটি হয়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগানোর উৎসব।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...