ফাইল ছবি।
বিজ্ঞাপন
রোববার (৭ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধের লক্ষ্যে আয়োজিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'খাদ্যে বিভিন্ন দূষণের অস্তিত্ব সম্পর্কে আমরা জানি; এটাকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায় সেই ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে। আমাদের সন্তান, বাবা-মা, আপনজন সবাই এর ভুক্তভোগী। নিজেদের স্বার্থেই আমাদের সকলকে একসঙ্গে এই সংকট মোকাবিলায় কাজ করতে হবে।'
ড. ইউনূস দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে বলেন, 'বাস্তবায়নের দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব কোনটি এখনই শুরু করা জরুরি। এ বিষয়ে জরুরি উদ্যোগগুলো আমরা তাৎক্ষণিকভাবে নেব।' তিনি সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে খাদ্যে দূষণ সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রস্তাবনা লিখিত আকারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) উদ্বেগজনক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে। তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণার বরাত দিয়ে জানায়, খাদ্যবাহিত রোগে প্রতি বছর বিশ্বে ৬০ কোটি এবং বাংলাদেশে ৩ কোটি শিশু আক্রান্ত হয়। এছাড়া, প্রতি বছর খাদ্যবাহিত রোগে আক্রান্ত ১০ জন শিশুর মধ্যে ১ জন অসুস্থ হয় এবং আক্রান্তদের এক-তৃতীয়াংশ শিশু মৃত্যুবরণ করে।
বিএফএসএ জানায়, খাবারে চার ধরনের দূষক থাকতে পারে— ভারী ধাতু, কীটনাশক-জীবনাশক এর অবশিষ্টাংশ, তেজস্ক্রিয়তা ও জৈবদূষক। গত অর্থবছর ১৭১৩টি এবং চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৮১৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে মোট ১৮০ নমুনার মধ্যে ২২টিতেই অতিরিক্ত মাত্রায় সীসা/সীসা ক্রোমেট শনাক্ত হয়েছে।
ইউনিসেফের একটি জরিপের তথ্য তুলে ধরে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জাকারিয়া জানান, বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে তিন কোটি শিশু সীসার সংক্রমণে আক্রান্ত। সীসা মানবদেহে প্রবেশ করে মস্তিষ্ক, যকৃৎ, কিডনি, হাড় এবং দাঁতে জমা হয় এবং শিশুদের হাড় নরম হওয়ায় তা সরাসরি মস্তিস্কে চলে গিয়ে তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। গবেষণায় ৫ শতাংশ গর্ভবতী নারীদের মধ্যেও সীসার সংক্রমণ পাওয়া গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা হাঁস-মুরগি, দুগ্ধজাত খাদ্য ও মাছের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশকারী ক্ষতিকারক পদার্থ সম্পর্কে তথ্য দেন। তারা জানান, হাঁস-মুরগির খামারগুলোতে অনিয়ন্ত্রিত ওষুধ প্রয়োগ হয়, যার ফলে মুরগিকে দেওয়া অ্যান্টিবায়োটিক ২৮ দিন পর্যন্ত থেকে যেতে পারে। এই সময়সীমা পার হওয়ার আগেই মুরগি বাজারজাত করা হলে সেই মাংসের মাধ্যমে মানবদেহে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশ করে।
তারা আরও উল্লেখ করেন, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সতর্ক থাকলেও কিছু চোরাগোপ্তা কোম্পানি কর্তৃপক্ষের নজরদারি এড়িয়ে গোপনে পোল্ট্রি ফার্ম পরিচালনা করছে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাবরেটরি এবং শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা করার সক্ষমতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি খাদ্যে সীসার পরিমাণ নিয়ে একটি সমন্বিত গবেষণা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য নিশ্চিত করতে গিয়ে কখনো কখনো খাদ্যের নিরাপত্তার দিকটি উপেক্ষা করা হচ্ছে। তিনি এই বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যমগুলো ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন। তিনি খাদ্য নিরাপত্তাকে একটি জরুরি বিষয় আখ্যায়িত করে পাঠ্যপুস্তকে এই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন।
প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম প্রমুখ।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...