বিজ্ঞাপন
২০২১ সাল থেকে গোপালগঞ্জসহ ১০ জেলায় কার্যকর এই প্রকল্প ইতোমধ্যে মাছ সংরক্ষণে দৃশ্যমাণ সাফল্য দেখাচ্ছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, অভয়াশ্রম স্থাপন ও স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সম্পৃক্ত করায় এ সাফল্য এসেছে। শুধু মাছ সংরক্ষণ নয়, জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে মৎস্যজীবীদের মধ্যে ভ্যান, গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ২০২১ সালে দেশীয় মাছ ও শামুক সংরক্ষণের লক্ষ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করে। একই বছরের মার্চে গোপালগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিস ভবনে এর কার্যক্রম শুরু হয়। আগামী বছর জুনে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকল্পের অর্থায়নে এ পর্যন্ত গোপালগঞ্জে ৪৬টি, ফরিদপুরে ১৯টি, মাদারীপুরে ১১টি, শরীয়তপুরে ১৮টি, বরিশালে ৩৫টি, ঝালকাঠিতে ১২টি, পিরোজপুরে ২০টি, বরগুনায় ১৫টি, বাগেরহাটে ১১টি এবং নড়াইলে ১৩টি—মোট ২০০টি অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিটি অভয়াশ্রমের আয়তন ১ হেক্টর করে। ফলে মোট ২০০ হেক্টর জলাশয় এখন দেশীয় মাছের নিরাপদ প্রজননকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের নদী-খাল-বিলজুড়ে স্থাপিত এসব অভয়াশ্রমে শীতকালে পানি কমে গেলে মাছের জন্য নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করা হয়। বাঁশ, টিলার, গাছের ডালপালা এবং বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি এসব আশ্রয়স্থলকে ঘিরে ১ কিলোমিটারের মধ্যে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
প্রতিটি অভয়াশ্রম পরিচালনায় ২০ সদস্যের ব্যবস্থাপনা কমিটি রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি অভয়াশ্রমে একজন পাহারাদার নিয়োজিত আছে, যাকে মাসে ৭ হাজার ৫শ টাকা করে প্রকল্প থেকে দেওয়া হয়।
অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার ফলে চিতল, আইড়, বোয়াল, সরপুটি, বাচা, চ্যালেন্দা, রয়না, খলিশা, পাবদা, ট্যাংরা, নন্দেলসহ বহু বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছ এখন এসব জলাশয়ে পাওয়া যাচ্ছে। বর্ষায় এই মাছগুলো ছড়িয়ে পড়ছে নদী, খাল ও বিলজুড়ে।
প্রকল্পের সহকারী পরিচালক আসলাম হোসেন শেখ বলেন, “শীতকালে মাছ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। তাই ৮০০-র বেশি বাঁশ, ২১টি টিলার ও নানা উপকরণ দিয়ে অভয়াশ্রম তৈরি করেছি। এতে মাছ নিরাপদে বংশবিস্তার করতে পারছে। দেশীয় মাছ সংরক্ষণ হওয়ায় উৎপাদন বাড়ছে এবং প্রান্তিক জেলেরা নতুন করে জীবিকা ফিরে পাচ্ছেন। দেশীয় মাছ দেশের বড় জনগোষ্ঠীর নিরাপদ আমিষের প্রয়োজনও পূরণ করছে।”
প্রকল্প পরিচালক মো. খালিদুজ্জামান জানান, “তিন বিভাগের ১০ জেলায় ২০০ অভয়াশ্রম স্থাপনের মাধ্যমে দেশীয় মাছ সংরক্ষণের কার্যকর কাঠামো গড়ে উঠেছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষা, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নিরাপদ আমিষের টেকসই সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি মৎস্যজীবীরাও এর সুফল পাচ্ছেন।”
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা জেলে পাড়ার জেলে অনিল মালো (৬২) বলেন, “দেশীয় মাছ তো প্রায় হারিয়েই গিয়েছিল। এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি দেশীয় মাছ পাওয়া যায়। এ প্রকল্প যদি দীর্ঘদিন চলমান থাকে, তাহলে দেশীয় মাছ আরও বেশি সংরক্ষিত হবে এবং প্রাচুর্যও বাড়বে।”
দেশীয় মাছের প্রজনন ক্ষেত্র রক্ষা ও প্রাকৃতিক জলাশয়ে জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনতে এমন উদ্যোগ দেশের সামগ্রিক মৎস্য উৎপাদন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে—এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...