Logo Logo

চুরি-ছিনতাই রোধে ৯ সদস্যের নতুন নিরাপত্তা কমিটি গঠন

বেনাপোল স্থলবন্দরে নিরাপত্তা সংকট চরমে


Splash Image

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রথম শ্রেণীর কেপিআইভুক্ত বেনাপোল স্থলবন্দরের নিরাপত্তা ঘাটতি, যাত্রী হয়রানি এবং চুরি-ছিনতাইয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নিরাপত্তা জোরদার ও সার্বিক কার্যক্রম তদারকির লক্ষ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষ ৯ সদস্যবিশিষ্ট নতুন নিরাপত্তা কমিটি গঠন করেছে।


বিজ্ঞাপন


মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) বিকালে বেনাপোল আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) কে আহ্বায়ক এবং সহকারী পরিচালক (প্রশাসন-১) কে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটিতে আরও রয়েছেন—উপ-পরিচালক (ট্রাফিক)-১, সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক)-১, সহকারী প্রোগ্রামার, এপিবিএন ক্যাম্প ইনচার্জ, ফায়ার পরিদর্শক, আনসার প্লাটুন কমান্ডার এবং বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তা।

সভাপতিত্ব করেন বন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) ও উপ-সচিব মো. শামীম হোসেন। তিনি বলেন, “সিসিটিভি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে আমরা সার্বিক নিরাপত্তা নজরদারি করি। তবে বন্দর এলাকায় সব প্রশাসন একসাথে কাজ করলে বেনাপোলকে আরও শক্ত নিরাপত্তা বলয়ে আনা সম্ভব।”

তিনি আরও জানান, চোরাচালান, চুরিচামারি ও চেকপোস্ট এলাকায় বাড়তে থাকা অপরাধ প্রতিরোধে টার্মিনালে ম্যাজিস্ট্রেট অফিস স্থাপন করা হয়েছে, যাতে দ্রুত বিচার কার্যক্রমের মাধ্যমে অপরাধীদের তাৎক্ষণিক সাজা দেওয়া যায়।

সভায় বক্তারা সিকিউরিটি গার্ডদের আচরণ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের মতে, বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সবচেয়ে দুর্বল অংশ হলো এই সিকিউরিটি গার্ডরা। যথাযথ নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে চুরি-ছিনতাই বন্ধ করা কঠিন হবে।

স্থানীয় বন্দর ব্যবহারকারী ও যাত্রীরা জানান, বন্দরে শ্রমিকদের জন্য টয়লেট নেই, নামাজের নির্ধারিত জায়গা নেই, অথচ যাত্রীসেবার নামে আদায় করা ৬০ টাকা সার্ভিস ফি’র কোনো সুবিধা তারা পান না। প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবনের বড় অংশ প্রশাসনের দখলে থাকায় যাত্রীদের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

যাত্রীদের অভিযোগ, “গরুর খাটালের মতো লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে ক্লান্ত হয়ে মাটিতে বসে পড়তে হয়। টয়লেটও ব্যবহার করা যায় না। এতে প্রতিনিয়ত চুরি-ছিনতাইয়ের ঝুঁকিতে পড়তে হয়।”

একাধিক সূত্র জানায়, বন্দর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে একটি বড় চুরি-ছিনতাই ও প্রতারণা সিন্ডিকেট সক্রিয়। অনেক যাত্রী চলার পথে সর্বস্ব হারিয়েছেন, এমনকি চিকিৎসার টাকা খুইয়ে কেউ কেউ মৃত্যুবরণও করেছেন।

আলোচনা সভায় নিরাপত্তা জোরদার ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—

* এপিবিএন, আনসার ও বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীদের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক মনিটরিং

* নিয়মিত উপস্থিতি ও বায়োমেট্রিক হাজিরা পর্যালোচনা

* বকশিশ, চাঁদা ও মাসোয়ারা আদায় বন্ধে কঠোর সুপারিশ

* অগ্নিকাণ্ড ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ

* প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সভা করে নিরাপত্তা অগ্রগতির প্রতিবেদন বন্দর পরিচালকের কাছে জমা দেওয়া

সভায় বেনাপোল বন্দর, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন পুলিশ, জেলা পুলিশ, বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থা, ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতি এবং হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...